অন্ধ ভিখারি ভিক্ষা করতে করতে একদিন রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়লো, রাজার মনে দয়া হলো।রাজামশাই মন্ত্রীকে ডেকে বললেন- এই ভিক্ষুক জন্মান্ধ নন, তার চিকিৎসা করানো হোক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিকিৎসা করানো হলে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে। রাজ-বৈদ্য কে ডাকা হলো। অন্ধের চোখ পরীক্ষা করে বললেন- মহারাজ, আপনার অনুমান সত্যি। তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন, কিন্তু চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ আর ব্যায়বহুল। রাজামশাই বললেন- কোনো সমস্যা নাই, আপনি চিকিৎসা শুরু করুন। বৈদ্য-রাজ চলে গেলেন, আগামী কাল থেকেই চিকিৎসা শুরু করা হবে। অন্ধকে রাজপ্রাসাদের কোনে, একটা ছোট্ট কুটিরে থাকার ব্যাবস্থা করে দেওয়া হলো। রাতের খাবার খেতে খেতে মন্ত্রী বললেন- মহারাজ, একটা কথা বলার ছিলো।ভিক্ষুকের চেহারা-টা কিন্তু দশাসই, যদি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায়, সে আপনার দূর্নীতি, স্বজনপোষণ, আপনার আয়েশ আরাম, এসব দেখে ফেলবে, প্রতিবাদ করবে।শুধুশুধু শত্রু বাড়াতে যাবেন কেন? বরং একে অন্ধ করেই রেখে দিন, দুবেলা দুমুঠো খেতে দিন, সারাদিন তাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আপনার মহত্ত্ব প্রচার করতে দিন। আপনার গুনগান গাইতে থাকুক। প্রয়োজনে দেশে যতো অন্ধ আছে, সবাইকে এক জায়গায় করা হোক। একটা বড়ো হলঘরে সকলের থাকার ব্যাবস্থা করুন। সকালবেলা পেট ভরে খেয়ে বেরিয়ে যাক, সারাদিন আপনার গুনকীর্তন করে, সন্ধাবেলা ফিরে এসে, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুক। রাজামশাই মাথা নেড়ে, বললেন- পরামর্শ-টা মন্দ নয়! মন্ত্রী অট্টহাসি হেসে বললেন- মহারাজ, আমি যোগ্য রাজার উপযুক্ত মন্ত্রী, সবই আপনার করুনা। সকল অন্ধ এক জায়গায় হয়ে, প্রতিদিন এক এক এলাকায় গিয়ে রাজার মহিমা প্রচারের কাজে লেগে গেলো। বিনিময়ে দুবেলা দুমুঠো অন্ন। প্রজাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মান-অভিমান, জ্বালা-যন্ত্রণা, সবকিছু অন্ধদের গুনকীর্তনে চাপা পড়ে গেলো। অন্ধ গুলো বুঝতে পারলো না রাজার কৌশল। দুবেলা দুমুঠো খেতে পেয়েই তারা সন্তূষ্ট, অথচ দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলে, তারা নিজের শরীরকে কাজে লাগিয়ে রোজগার করে খেতে পারতো, সুন্দর পৃথিবীর অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে পেতো। কিন্তু, নির্বোধ তারা, সামান্য দান-খয়রাত, ভিক্ষা, ভোজনে মেতে রইলো।
বর্তমানে দেশে-বিদেশে এভাবেই চলছে রাজার জনসেবা। শিক্ষা এবং রোজগারের দিশা দেখাচ্ছে না। সবাই সঠিক শিক্ষা পেলে এবং সবার হাতে কাজ থাকলে, রাজার সমালোচক উত্তরোত্তরবৃদ্ধি পাবে, আর সেটা রাজার জন্য বিশেষ সুখকর হবে না।