ওয়াজ মাহফিলের নামে বিনোদন!

ওয়াজের নামে বিনোদন

এক সময় সাধারণ মানুষের যে ওয়াজ মাহফিল ছিলো ইসলাম শিক্ষার মাধ্যম, সেই মাহফিল এখন কমেডি শোতে পরিনত হয়েছে। দর্শকদের সস্তা বিনোদন দেওয়া অথবা অনলাইনের ভাইরাল হওয়ার নেশায় বক্তারা যে সব কার্যকলাপ করে বেড়ান তার সাথে আদৌ ওয়াজের কোন সম্পর্ক নেই।

আপনি কোন গানের অনুষ্টান আছেন, কিছুক্ষণের জন্য এমনটা মনে হলেও আসলে আপনি ওয়াজ মাহফিলে রয়েছেন। যে সব স্রোতা গানের বদলে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন, তারা যেন গানের feelings থেকে বঞ্চিত না হয়। সেজন্য আজকাল অনেক বক্তা stage এ ওঠে বাংলা, হিন্দি ও উর্দূ গানের performance করে থাকেন। বিশেষ করে চলমান কোন ভাইরাল গানও তাদের হাত থেকে নিস্তার পায় না। আরেক ধরনের বক্তা রয়েছে যারা বাংলা ও হিন্দি গানকে গজলে convert করতে অতিশয় দক্ষ। বলাবাহুল্য সেক্ষেত্রে বারবার সেই গানটি শোনে সেটাকে সহি বানানোর দ্বায়িত্ব আল্লাহ প্রদত্ত বলে অনেকে দাবী করেছেন। গানের পাশাপাশি বত্তারা অভিনয়েও চরম দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। বাংলা সিনেমায় কুশলি অভিনেতার যে আকাল চলছে, মাহফিলের কিছু বক্তা কিছুটা হলেও সে শূন্যতা পূরন করতে পেরেছেন। কমেডিয়ান মিস্টার দিলদার কিংবা মিস্টার বিন তাদের কাছে কিছুই নয়। সব মিলিয়ে ওয়াজ মাহফিলের এক প্যান্ডেলের নিচে থাকে শ্রোতাদের জন্য সমস্থ বিনোদনের আয়োজন। সনদ সহ দশটি হাদিস বলার যোগ্যতা না থাকলেও গরম বক্তৃতা দিয়ে শ্রোতাদের উত্তেজিত করতে কুলহু আল্লাহ থেকে কারবালায় চলে যান।

কোরআন হাদিস থেকে আলোচনার যোগ্যতা না থাকায় তারা গাল গল্প করে সময় কাটিয়ে দেন। তাদের মধ্যে শুদ্ধ করে কোরআন পাঠ করতে না জানলেও আসমানের নিচে জমিনের উপরের সবচেয়ে বড় তাফসীর গ্রন্থ "তাফসীরে বাশারী" ঠিক'ই লিখে ফেলেছেন। একজন শ্রোতা ওয়াজের পাশাপাশি যেন যথেষ্ট পরিমান বিনোদন নিয়ে রাতে বাড়ী ফিরতে পারে সে লক্ষে তাদের জন্য থাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বক্তার ব্যবস্থা। এদের মধ্যে রয়েছে ২৪ ইঞ্চি বক্তা, ২৫ ইঞ্চি বক্তা, নওমুসলিম বক্তা, শিশু বক্তা, নাবালক বক্তা, মহিলা থেকে পুরুষে রুপান্তর বক্তা, এমনকি সরাসরি মহিলা বক্তাও দেখতে পাওয়া যায়। অনেক বক্তার মুখ থেকে ওয়াজের পরিবর্তে মধু নির্গত হয়, একে অপরের বিরুদ্ধে বদনাম দোষারোপ ও ফেতনা সৃষ্টি করে অনেকে শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার প্রসারে ভূমিকা রাখে মাদ্রাসা, মসজিদ, পীর মুরিদ, তাবলীগ। এসবের পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গন ওয়াজ মাহফিল। অযোগ্য বিতর্কিত বক্তাদের থেকে এই অঙ্গন নিরাপদ রাখার দায়িত্ব মাহফিলের আয়োজক ও শ্রোতাদের। লক্ষ টাকা খরচ করে কমেডি বক্তা না এনে, যোগ্য ও আমলী বক্তা দাওয়াত দেওয়া'ই হবে ঈমান ও আমলের উন্নতির সবচেয়ে বড় কাজ।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form