তেল মারুন জীবন গড়ুন

সমাজে তেল মারা লোকের অভাব নাই, কে কাকে কতটুকু তেল মেরে নিজের অবস্থা পাকা পোক্ত করবে তা নিয়ে ব্যস্ত। আমিও অবাক হই যাকে তেল মারে অর্থাৎ তোষামদ করে সেও খুব খুশি এ ব্যাপারটা নিয়ে। অথচ এই সমস্ত গাধা টাইপের মানুষ গুলোর কারনেই একটা দেশ, একটা সমাজ, একটা Oilman, একটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পথে। তেল নিয়ে কম রঙ্গ হয়নি এই বঙ্গে। এখনও যে হচ্ছে না তা নয়। হচ্ছে এবং আগের চেয়ে বেশিই হচ্ছে। তবে তেল এখন শুধু আর রঙ্গ নয় এটি আমাদের দেহ ও সমাজের একটি অঙ্গ। চারদিকে শুধু তেল আর তেল। আমরা সবাই এখন একেকটি তেলের বিশাল কণর্ধার। আর কিছু নয়, সর্বোৎকৃষ্ট জায়গায় কিভাবে তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়, তা জানার জন্যই আমরা সবাই এখন হন্যে হয়ে ছুটছি। তেল মারতে মারতে একেকজনের গায়ের চামড়া তুলে ফেললেও আমরা ক্ষান্ত হইনা। উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত খুঁজতে থাকি আর কাকে তেল মারা যায়।

যদি তুমি ত্যাগী হও তবে তুমি শেষ, 

যদি তুমি তেলবাজ হও তবে তুমি বেশ

কান পাতলেই আমরা এখন দুই শব্দের একটা বাক্যই শুধু শুনি। তেল মার, তেল মারো এবং তেল মারুন। বন্ধু বন্ধুকে বলে- তেল মার, আত্মীয় আত্মীয়কে বলে- তেল মার, শিক্ষক ছাত্রকে বলে- তেল মার, প্রেমিক প্রেমিকাকে বলে- তেল মারো, স্ত্রী স্বামীকে বলে- তেল মারো, স্বামী স্ত্রীকে বলে- তেল মারো, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে বলে- তেল মারুন, সহকর্মী সহকর্মীকে বলে- তেল মারুন। আরেকটু এগোলে এর পাশে আরও দু’টি শব্দ শুনি, 

তেল মারুন জীবন গড়ুন

তেলই শক্তি তেলেই মুক্তি

তেল এখন সত্য, তেলই এখন ধর্ম। আমরা সবাই এই তেলের বশ্যতা স্বীকার করেছি। ব্রিটিশরাজকে তেল মারতে শিখে আমরা এই তেল বিদ্যাটি আমাদের রক্তে, মাংসে, অস্থি, মজ্জাতে মিশিয়ে ফেলেছি।আমাদের মনো-জগতে এখন শুধু তেল। তেল ছাড়া আমরা ভাবতে পারিনা, কথা বলতে পারিনা, চলতে পারিনা, অর্জণ করতে পারিনা। তেলের এ যুগে তেল ছাড়া প্রেম হয়না, প্রেম টিকিয়ে রাখা যায় না, বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না, চাকরি হয়না, হলেও টিকিয়ে রাখা যায় না, ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না, মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় না। তেল এমনই এক যাদুকরী টোটকা যে এর মাধ্যমে সব হয়। এই তেল মারা মানে তেল ঝড়ে ঝড়ে পড়া হাসিযুক্ত পা চাটা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষকরা আমাদের প্রতিনিয়ত এই তেল মারাই শেখাচ্ছেন। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতির জন্য, ভিসি-প্রোভিসি হওয়ার জন্য গন্ডমূর্খ এমপি-মন্ত্রীদের পা চাটার মাধ্যমে তেল মারতেও তারা দ্বিধা করেন না। আমরা দেখছি এবং শিখছি। এসব মহান (?) এ তেল বিদ্যা যে যত বেশি আয়ত্ব করতে পারি, জীবনে সে ততটাই উন্নতি করি। আমরা বিশ্বাস করতে শিখি, তেলহীন বিদ্যা ফুঁটো পয়সার মতোই অচল। আমাদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, অস্তিত্ব, সমাজ, সংসার, আকাশ, বাতাস, চাঁদ, জোৎস্না, সূর্য এখন তেল নির্ভর হয়ে পড়েছে। অন্যকে কিভাবে তেল মারা যায় তার কায়দা কানুন জানতেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে শাণিত করতে, নিজেকে তেল মারার কথা আমরা চিন্তাও করিনা। পৃথিবীতে কারো মন জয় করার জন্য তেল মারার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তেল জীবন


Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form