আমার ঘুমটা আমাকেই ঘুমাতে হবে, আমার জাগাটা আমাকেই জাগতে হবে। আমি জাগতে না চাইলে কারো সাধ্য নেই যে, আমাকে জাগায়, আমি ঘুমাতে না চাইলে কারো সাধ্য নেই যে, আমাকে ঘুমাতে বাধ্য করে। হাঁটার সময় কাউকে সাথে পেলে হাঁটার কষ্টটা বেশ কমে যায়। কিন্তু যদি এমন কাউকে হাঁটার সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়, যে আমাকে হাঁটতেই দেয় না, তবে একলা হাঁটাই উত্তম পন্থা।
আমাদের যারা শুভাকাঙ্ক্ষী বা পূর্বসূরি, তাহারা আমাকে পথ দেখাবেন। কিন্তু সে পথে হাঁটার কাজটা আমাকেই করতে হবে। আমার হাঁটাটা কেউ হেঁটে দেবে না, আমার ভাগ্য কেউ গড়ে দেবে না, আমার কষ্টটা কেউ ভোগ করে দেবে না। সুখ যদি একাই ভোগ করতে চাই, তবে কোন আক্কেলে দুঃখের ভাগীদার খুঁজে মরি? জীবনে কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা করতে হয়। তবু, আমাদের জীবনটা আমাদের পরিকল্পনা মাফিক কতটুকুই বা চলে? যে লোকটি এতিম শিশুদের নিয়ে কাজ করার সকল পরিকল্পনা গুছিয়ে ছিলো, সে হঠাৎ করেই ক্যানসারে মারা গেল। এর মানে কি? জীবন চলে স্রষ্টার পরিকল্পনায়, সেখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। হ্যাঁ, আমরা যা করতে পারি তা হলো- যদি বেঁচে থাকি, তবে যে পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যদি কখনো সে পথটাই হারিয়ে যায়, তবে নিজেই নিজের সুবিধামত নতুন পথ সৃষ্টি করে নিতে পারি। কাজটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং, কঠিন, শ্রমসাপেক্ষ, তবে অসাধ্য নিশ্চয়ই নয়। সোজা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে এই নয় যে, আর কোন রাস্তা নেই। এর মানে হলো, ঘোরানো রাস্তা ধরতে হবে। প্রায়ই এমন হয়, আমরা বিশ্বাস করে নিই রাস্তা নেই, কিংবা আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি, কিংবা রাস্তা ওই দূরে যেখানে ঠিক সময়ের মধ্যে পৌঁছানো অসম্ভব, কিংবা রাস্তার খোঁজ আমরা আর কোনোদিনই পাবো না। অথচ, আমরা যেখানে আছি, সেটাই সঠিক রাস্তা যা আমরা কখনোই জানতে পারিনি। ঠিক জিনিসের খোঁজ পেতে দেখতে জানতে হয়। জীবনের জুয়া খেলায় জেতার দুটো পথ আছে- হয় রাস্তা খুঁজে নাও, নতুবা নিজেই নিজের রাস্তা বানাও। যে করেই হোক, সামনের দিকে চলতে হবে, কিছুতেই থামা যাবে না। ধুলো কুয়াশা ঝড়, মরীচিকার মতো আমাদের রাস্তা আড়াল করে রাখে। দেখার দৃষ্টি আর বোঝার ধরনটা বদলাতে পারলে সকল বাধা আর প্রহেলিকা দূর হয়ে সহজ রাস্তার খোঁজটা আমরা পেয়ে যাবো। আমাদের যে স্বপ্নটি সবচাইতে সুন্দর, সে স্বপ্নে পৌঁছানোর কোনো রাস্তা নেই, কারণ সে স্বপ্নে হয়তো এখনো কেউই পৌছয়নি। এক্ষেত্রে আমরা যে পথে পা রাখবো, সেটাই আমাদের রাস্তা। যে পথ ধরে আমরা হেঁটে ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যাবো, লোকে সে পথকেই নাম দেবে রাস্তা।
যেদিন আমরা এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, সেদিন থেকেই আমাদের একলা হাঁটতে হয়। হয়তো আমরা না বুঝে বা না জেনে ছদ্মবেশী আনন্দেই অন্ধকারকে আলো ভেবে জীবন কাটিয়ে দিই, কিংবা এতোটাই বাস্তবতা নিয়ে জীবন কাটাই, যা আমাদের প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে রাখে। ক্ষণিকের সুখ দুঃখকে আমরা চিরস্থায়ী বলে ভুল করি, আশংকা আর সম্ভাবনাকে ধ্রুব ধরে নিরাসক্ত নির্লিপ্ত নিরাবেগ হয়ে বসে থাকি। জীবনযাপন যাত্রায় আমরা কাকে সঙ্গী করবো, এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা ভীষণ কঠিন ও দুঃসাহসের একটা কাজ। এই পৃথিবীতে বাঁচার সবচাইতে বড় ট্র্যাজেডি হলো এই, এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচার জন্য আমাদের কেবল একটি মাত্র জীবন দেয়া হয়েছে। নিজের জীবনটা নিজেকেই বাঁচতে হয়। জীবনটা কাটানোর কোনো ম্যানুয়েল নেই, কোনো নেতা বা মহাত্মাকে আইডল বানিয়ে উনার মতো করে নিজের জীবনটা কাটানোর কোনো মানেই হয় না। নিজের ভূমি কর্ষণ করতে হয় নিজেকেই, একেক ভূমির কাঠিন্য ও গঠন একেকরকমের। কোন উপায়ে ভূমিকে চাষাবাদের উপযোগী করা যাবে, এর কোনো সর্বজনসিদ্ধ নিয়ম নেই। তখন নিজের হৃদয়ের কথা শুনতে হয়। হৃদয়ের দ্বার খোলা রাখলে প্রয়োজনীয় কোনোকিছুকে গ্রহণ কিংবা অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছুকে বর্জন, দুইই সহজ হয়। একমাত্র নিজের হৃদয়ই জানে, কোন পথে চললে জীবনে আফসোস কম থাকবে। নিজের হৃদয়ের কথা মতো চলে যদি ভুল গন্তব্যেও পৌঁছায়, তবুও এতোটা আফসোস থাকে না। অন্যের বুদ্ধিতে ঠিক করার চাইতে নিজের বুদ্ধিতে ভুল করাটা বেশি শেখায়। অন্যের পথে চলে প্রাসাদে পৌঁছানোর চাইতে বরং নিজের পথে চলে কুটিরে পৌঁছানোর আনন্দ ও গৌরব দুইই অনেকবেশি। জীবন চলার পথে হাঁটার জন্য সাথে কাউকে পেলে হাঁটার ক্লান্তি অনেকটাই কমে যায়। এজন্য কমে না যে, হাঁটার কাজের খানিকটা পথের সঙ্গী করে দেয়। পাশে কেউ থাকলে মনে সাহস থাকে, পথের দূরত্বকে কম মনে হয়, মানসিক শক্তি বাড়ে। তবে যাকে পাশে রেখে পথ চললে পথটাই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তার সাথে চলার চাইতে একলা চলা অনেক ভাল।
হোক হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, কিংবা শিখ। সত্যের পথে যারা চলে তাদের সবারই ধর্মই মূলত এক। তাদের চলার পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য ও গন্তব্য একই। সত্য সকল মানুষকে একই সুতোয় গাঁথে, মানুষ বিভক্ত হয় মিথ্যার মোহনীয় ফাঁদে। মন যখন সকল আবর্জনা দূর করে পরিচ্ছন্ন হয়, মনে তখন আনন্দ আসে, স্বস্তি ও শান্তির সুবাতাস মনকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। আমার লক্ষ্য একমাত্র আমারই, আমি যেমন করে সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই, ঠিক তেমন করে অন্য কেউ পৌঁছাতে চাইবে না। আমি যখন সে লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি, হয়তো আশেপাশে অনেককেই পাবো, যারাও আমার মতোই একই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার চেষ্টা যেমন তাদের কোনো কাজে আসবে না, তেমনি তাদের চেষ্টাও আমার কোনো কাজে আসবে না। আমার যা কষ্ট, তা হয়তো অনেকেরই কষ্ট। তারা আমার সাথেই একই কষ্ট ভোগ করবে হয়তো, কিন্তু আমার কষ্টটা আমাকেই ভোগ করতে হবে, তারা ভোগ করবে তাদের কষ্ট। কারো কষ্টভোগ আমার কষ্টকে কোনোভাবেই কমিয়ে দেবে না। যে স্বর্গ হাতে পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি, সে স্বর্গ হয়তো অনেকেই পাবে, তবে আমার স্বর্গটা আমাকেই অর্জন করতে হবে। আমার কবরটা অন্য কেউ হয়তো খুঁড়ে দিতে পারবে, তবে সে কবরের শান্তি বা অশান্তি গ্রহণ করতে হবে আমাকেই। যাদের সাথে মিশে আমার পৃথিবীটাকে আমি নরক বানিয়ে ফেলছি, যখন নরকের আগুন জ্বলে উঠবে, তখন হয়তো তারাও আমার মতোই অগ্নিকুণ্ডে পুড়বে, কিন্তু আমার দহনের যন্ত্রণাটা একা আমাকেই ভোগ করতে হবে। আমার জীবনে অনেকেই আমার সাথে বাঁচবে, হোক সে বাঁচার ধরনটা ভাল কিংবা মন্দ, তবে আমার বাঁচার কাজটা আমাকেই করতে হবে। যখন আমি কষ্ট পাই, অসুস্থ হই, বিপদে পড়ি, বিমর্ষ থাকি, যখন আমার মন খারাপ হয় ক্লান্ত লাগে, অসহায় লাগে, তখন আমার চারপাশের যাদের দিকে তাকিয়ে ভাবি, তারাও আমার ব্যথায় সমব্যথী, সমভাগী। তারা প্রকৃতপক্ষে আমার ব্যথাটা স্রেফ চোখে দেখছে আর নিজের হৃদয়ে সে ব্যথার তীব্রতা কল্পনা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ব্যথার যে বাস্তব অনুভূতি, কারো পক্ষেই তা অনুভব করা সম্ভব নয়, হোক সে নিজের বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী কিংবা স্ত্রী, সে যতোই দাবি করুক না কেন সে আমার ব্যথাটা অনুভব করতে পারছে, সে প্রকৃতপক্ষে আমি যে ব্যথা পাচ্ছি, তা দেখে ব্যথা পাচ্ছে। আপনি যে ব্যথার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন না, আপনার পক্ষে সে ব্যথার প্রকৃত রূপ অনুমান করা সম্ভব, কখনোই অনুভব করা সম্ভব নয়। ব্যথার যাবতীয় ধরনই সবসময়ই একেকটা স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত অনুভূতি। তাই, “সমব্যথী” শব্দটি আক্ষরিক অর্থে তা নিরর্থক হয়ে যায়।
আমাদের যারা শুভাকাঙ্ক্ষী বা পূর্বসূরি, তাহারা আমাকে পথ দেখাবেন। কিন্তু সে পথে হাঁটার কাজটা আমাকেই করতে হবে। আমার হাঁটাটা কেউ হেঁটে দেবে না, আমার ভাগ্য কেউ গড়ে দেবে না, আমার কষ্টটা কেউ ভোগ করে দেবে না। সুখ যদি একাই ভোগ করতে চাই, তবে কোন আক্কেলে দুঃখের ভাগীদার খুঁজে মরি? জীবনে কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা করতে হয়। তবু, আমাদের জীবনটা আমাদের পরিকল্পনা মাফিক কতটুকুই বা চলে? যে লোকটি এতিম শিশুদের নিয়ে কাজ করার সকল পরিকল্পনা গুছিয়ে ছিলো, সে হঠাৎ করেই ক্যানসারে মারা গেল। এর মানে কি? জীবন চলে স্রষ্টার পরিকল্পনায়, সেখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। হ্যাঁ, আমরা যা করতে পারি তা হলো- যদি বেঁচে থাকি, তবে যে পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যদি কখনো সে পথটাই হারিয়ে যায়, তবে নিজেই নিজের সুবিধামত নতুন পথ সৃষ্টি করে নিতে পারি। কাজটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং, কঠিন, শ্রমসাপেক্ষ, তবে অসাধ্য নিশ্চয়ই নয়। সোজা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে এই নয় যে, আর কোন রাস্তা নেই। এর মানে হলো, ঘোরানো রাস্তা ধরতে হবে। প্রায়ই এমন হয়, আমরা বিশ্বাস করে নিই রাস্তা নেই, কিংবা আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি, কিংবা রাস্তা ওই দূরে যেখানে ঠিক সময়ের মধ্যে পৌঁছানো অসম্ভব, কিংবা রাস্তার খোঁজ আমরা আর কোনোদিনই পাবো না। অথচ, আমরা যেখানে আছি, সেটাই সঠিক রাস্তা যা আমরা কখনোই জানতে পারিনি। ঠিক জিনিসের খোঁজ পেতে দেখতে জানতে হয়। জীবনের জুয়া খেলায় জেতার দুটো পথ আছে- হয় রাস্তা খুঁজে নাও, নতুবা নিজেই নিজের রাস্তা বানাও। যে করেই হোক, সামনের দিকে চলতে হবে, কিছুতেই থামা যাবে না। ধুলো কুয়াশা ঝড়, মরীচিকার মতো আমাদের রাস্তা আড়াল করে রাখে। দেখার দৃষ্টি আর বোঝার ধরনটা বদলাতে পারলে সকল বাধা আর প্রহেলিকা দূর হয়ে সহজ রাস্তার খোঁজটা আমরা পেয়ে যাবো। আমাদের যে স্বপ্নটি সবচাইতে সুন্দর, সে স্বপ্নে পৌঁছানোর কোনো রাস্তা নেই, কারণ সে স্বপ্নে হয়তো এখনো কেউই পৌছয়নি। এক্ষেত্রে আমরা যে পথে পা রাখবো, সেটাই আমাদের রাস্তা। যে পথ ধরে আমরা হেঁটে ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যাবো, লোকে সে পথকেই নাম দেবে রাস্তা।
যেদিন আমরা এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, সেদিন থেকেই আমাদের একলা হাঁটতে হয়। হয়তো আমরা না বুঝে বা না জেনে ছদ্মবেশী আনন্দেই অন্ধকারকে আলো ভেবে জীবন কাটিয়ে দিই, কিংবা এতোটাই বাস্তবতা নিয়ে জীবন কাটাই, যা আমাদের প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে রাখে। ক্ষণিকের সুখ দুঃখকে আমরা চিরস্থায়ী বলে ভুল করি, আশংকা আর সম্ভাবনাকে ধ্রুব ধরে নিরাসক্ত নির্লিপ্ত নিরাবেগ হয়ে বসে থাকি। জীবনযাপন যাত্রায় আমরা কাকে সঙ্গী করবো, এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা ভীষণ কঠিন ও দুঃসাহসের একটা কাজ। এই পৃথিবীতে বাঁচার সবচাইতে বড় ট্র্যাজেডি হলো এই, এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচার জন্য আমাদের কেবল একটি মাত্র জীবন দেয়া হয়েছে। নিজের জীবনটা নিজেকেই বাঁচতে হয়। জীবনটা কাটানোর কোনো ম্যানুয়েল নেই, কোনো নেতা বা মহাত্মাকে আইডল বানিয়ে উনার মতো করে নিজের জীবনটা কাটানোর কোনো মানেই হয় না। নিজের ভূমি কর্ষণ করতে হয় নিজেকেই, একেক ভূমির কাঠিন্য ও গঠন একেকরকমের। কোন উপায়ে ভূমিকে চাষাবাদের উপযোগী করা যাবে, এর কোনো সর্বজনসিদ্ধ নিয়ম নেই। তখন নিজের হৃদয়ের কথা শুনতে হয়। হৃদয়ের দ্বার খোলা রাখলে প্রয়োজনীয় কোনোকিছুকে গ্রহণ কিংবা অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছুকে বর্জন, দুইই সহজ হয়। একমাত্র নিজের হৃদয়ই জানে, কোন পথে চললে জীবনে আফসোস কম থাকবে। নিজের হৃদয়ের কথা মতো চলে যদি ভুল গন্তব্যেও পৌঁছায়, তবুও এতোটা আফসোস থাকে না। অন্যের বুদ্ধিতে ঠিক করার চাইতে নিজের বুদ্ধিতে ভুল করাটা বেশি শেখায়। অন্যের পথে চলে প্রাসাদে পৌঁছানোর চাইতে বরং নিজের পথে চলে কুটিরে পৌঁছানোর আনন্দ ও গৌরব দুইই অনেকবেশি। জীবন চলার পথে হাঁটার জন্য সাথে কাউকে পেলে হাঁটার ক্লান্তি অনেকটাই কমে যায়। এজন্য কমে না যে, হাঁটার কাজের খানিকটা পথের সঙ্গী করে দেয়। পাশে কেউ থাকলে মনে সাহস থাকে, পথের দূরত্বকে কম মনে হয়, মানসিক শক্তি বাড়ে। তবে যাকে পাশে রেখে পথ চললে পথটাই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তার সাথে চলার চাইতে একলা চলা অনেক ভাল।
হোক হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, কিংবা শিখ। সত্যের পথে যারা চলে তাদের সবারই ধর্মই মূলত এক। তাদের চলার পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য ও গন্তব্য একই। সত্য সকল মানুষকে একই সুতোয় গাঁথে, মানুষ বিভক্ত হয় মিথ্যার মোহনীয় ফাঁদে। মন যখন সকল আবর্জনা দূর করে পরিচ্ছন্ন হয়, মনে তখন আনন্দ আসে, স্বস্তি ও শান্তির সুবাতাস মনকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। আমার লক্ষ্য একমাত্র আমারই, আমি যেমন করে সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই, ঠিক তেমন করে অন্য কেউ পৌঁছাতে চাইবে না। আমি যখন সে লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি, হয়তো আশেপাশে অনেককেই পাবো, যারাও আমার মতোই একই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার চেষ্টা যেমন তাদের কোনো কাজে আসবে না, তেমনি তাদের চেষ্টাও আমার কোনো কাজে আসবে না। আমার যা কষ্ট, তা হয়তো অনেকেরই কষ্ট। তারা আমার সাথেই একই কষ্ট ভোগ করবে হয়তো, কিন্তু আমার কষ্টটা আমাকেই ভোগ করতে হবে, তারা ভোগ করবে তাদের কষ্ট। কারো কষ্টভোগ আমার কষ্টকে কোনোভাবেই কমিয়ে দেবে না। যে স্বর্গ হাতে পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি, সে স্বর্গ হয়তো অনেকেই পাবে, তবে আমার স্বর্গটা আমাকেই অর্জন করতে হবে। আমার কবরটা অন্য কেউ হয়তো খুঁড়ে দিতে পারবে, তবে সে কবরের শান্তি বা অশান্তি গ্রহণ করতে হবে আমাকেই। যাদের সাথে মিশে আমার পৃথিবীটাকে আমি নরক বানিয়ে ফেলছি, যখন নরকের আগুন জ্বলে উঠবে, তখন হয়তো তারাও আমার মতোই অগ্নিকুণ্ডে পুড়বে, কিন্তু আমার দহনের যন্ত্রণাটা একা আমাকেই ভোগ করতে হবে। আমার জীবনে অনেকেই আমার সাথে বাঁচবে, হোক সে বাঁচার ধরনটা ভাল কিংবা মন্দ, তবে আমার বাঁচার কাজটা আমাকেই করতে হবে। যখন আমি কষ্ট পাই, অসুস্থ হই, বিপদে পড়ি, বিমর্ষ থাকি, যখন আমার মন খারাপ হয় ক্লান্ত লাগে, অসহায় লাগে, তখন আমার চারপাশের যাদের দিকে তাকিয়ে ভাবি, তারাও আমার ব্যথায় সমব্যথী, সমভাগী। তারা প্রকৃতপক্ষে আমার ব্যথাটা স্রেফ চোখে দেখছে আর নিজের হৃদয়ে সে ব্যথার তীব্রতা কল্পনা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ব্যথার যে বাস্তব অনুভূতি, কারো পক্ষেই তা অনুভব করা সম্ভব নয়, হোক সে নিজের বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী কিংবা স্ত্রী, সে যতোই দাবি করুক না কেন সে আমার ব্যথাটা অনুভব করতে পারছে, সে প্রকৃতপক্ষে আমি যে ব্যথা পাচ্ছি, তা দেখে ব্যথা পাচ্ছে। আপনি যে ব্যথার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন না, আপনার পক্ষে সে ব্যথার প্রকৃত রূপ অনুমান করা সম্ভব, কখনোই অনুভব করা সম্ভব নয়। ব্যথার যাবতীয় ধরনই সবসময়ই একেকটা স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত অনুভূতি। তাই, “সমব্যথী” শব্দটি আক্ষরিক অর্থে তা নিরর্থক হয়ে যায়।