অন্ধকার ছাড়া আলো

অন্ধকার না থাকলে যেমন আলোর কোন মুল্য নেই? ঠিক তেমনই- জীবনে দুঃখ না থাকে সুখের অনুভুতি পাওয়া যায় না। বিচার করার ক্ষমতাও থাকে না সুখ কি আর দুঃখ কি?

প্রত্যেক মানুষের জীবনে সুখ আসে। আর সেই সুখের দিনগুলি আমরা হেসে-খেলে কাটিয়ে দিয়ে থাকি। কিছু শেখার থাকলেও আমরা সুখ থেকে কোন শিক্ষা গ্রহন করিনা। কিন্তু দুঃখ যখন আসে, তখন আমাদের নিজের ভাগ্যকে দায়ী করি। সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করি বা নীয়তিতে লেখা আছে বলে ছেড়ে দেই। দুঃখ মানুষের জীবনে আসে মানুষকে শেখাতে, আমাদের অতীতে আমরা যা কিছু করে এসেছি, তার রিভিউ করার এমন কিছু শিক্ষা আমরা দুঃখ থেকে পাই।যা কোন বইপত্রে বা স্কুল কলেজে পাওয়া যায় না। আর যদি আমরা দুঃখ থেকে প্রকৃত শিক্ষা নিতে পারি, তবে মানুষের মত মানুষ হতে কেউ আটকাতে পারবে না। এই জীবনে বা এই পৃথিবীতে যারাই দুঃখ থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহন করেছেন, তাদের কাছে সুখ আর দুঃখ দুই-ই সমান।

আলো ও অন্ধকার একে অপরের পাশাপাশি বসবাস করে। একটিকে বাদ দিলে অন্যটি মূল্যহীন। আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা বিপরীতধর্মী উপাদান রয়েছে। আলো- সুখ-শান্তি, হাসি, আনন্দ ইত্যাদি মানুষের জীবনকে আলোড়িত করে তোলে। আর অন্ধকার- দুঃখ-বেদনা, কান্না ইত্যাদি মানুষের জীবনকে বিষাদে ভরিয়ে তোলে। কল্যাণকর বস্তুর পাশেই অকল্যাণকর বস্তুর অবস্থান। এদের একটিকে ছাড়া অন্যটি মূল্যহীন। দুঃখ আছে বলেই সুখ মহিমান্বিত। সুখ আছে বলেই মানুষ দুঃখকে মর্মে মর্মে বুঝতে পারে। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন এতো মূল্যবান। অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলোর গুরুত্ব বুঝতে পারি। কেবল আলোর মধ্যে শুধু বসবাস করলে আমরা আলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারতাম না। অতৃপ্তি না থাকলে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হতে পারত না। আবার মহৎ বেদনা না থাকলে মহৎ কাব্য কখনো সৃষ্টি হতো না। এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষিত করে। পৃথিবীতে সুখের পরশ আছে বলেই মানুষ দুঃখকে হাসি মুখে বরণ করে। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই মানুষ সুখের আশায় আজীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে, বাধা বিপত্তি অতিক্রম করলে জীবন সুখী ও সার্থক হবে। অন্ধকার শেষে যেমন আলো উদয় হয়, তেমনি দুঃখের শেষে জীবনে এক সময় সুখের সূর্য্য উদিত হয়। আলো ছাড়া অন্ধকার যেমন মূল্যহীন, তেমনি অন্ধকার ছাড়া আলোও মূল্যহীন।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form