নরসিংদী ও ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলায় প্রতি বছর গ্রামবাসী প্রতিপক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কয়েকটি মানুষের প্রান পৃথিবীকে থেকে বিদায় জানায়। আর কয়েক শত লোক মারাত্মক আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করে। এই যুদ্ধের নাম "টেটা যুদ্ধ"। আমি যখন কিশোর তখন লোক মানুষের কাছে খবর পেতাম যে, আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে ১৫/২০ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে মেঘনা নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে ভয়ংকর এই টেটাযুদ্ধ হত। প্রতি যুদ্ধে কেই না কেউ প্রান হারাত। তার চেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য ছিল টেটা বিদ্ধ মানুষদের করুন আর্তনাদ। স্বাধীনতার পর ৪৭ বছর পার হলো এখনও সেই এলাকার মানুষগুলো একই কায়দায় যুদ্ধ করে এবং প্রান হারায়। বাংলাদেশের অনন্য অন্চলের অনুপাতে এই অন্চলে সবচেয়ে বেশী টেটা যুদ্ধ হয়। তার মানে হল, এ পদ্ধতিতে মারামারি করার কৌশল আর কোন এলাকার মানুষ এতো রপ্ত করতে পারেনি। কোন দিন আর পারবেও না। এখানের গ্রামবাসীদের বাড়িতে যে সব শিশু জন্ম নেয়, তারা কিশোর থাকা অবস্থায় জেনে যায় কি করে টেটা তৈরী করতে হয়? বড়রা তাদের এসব শিখাতে পারলে খুশী হয়। কারন, বাঁচতে হলে টেটার ব্যবহার জানতে হবে- এই হলো তাঁদের নীতি। কোন কোন গ্রামে বংশ পরম্বপরায় বিবাদ লেগে থাকে। এ বছর কোন বংশের ১ জনকে হত্যা করা হলে পরের বছর অন্য বংশের ২ জনকে হত্যা করতে হবে! এই হলো অবস্থা। অর্থ্যাৎ এ মরণ যুদ্ধের যেন শেষ নেই। নাতী তার দাদা হত্যার বদলা নিতে গিয়ে হয়ত নিজেই প্রান হারায়। প্রতি বছর হাজার হাজার টেটা তৈরী করা হয় গ্রামে। এ যেন এক গুরুত্বপূর্ণ কারুশিল্প। যত প্রসার ততই এক কারো কারো জন্য লাভ। যত টেটা যুদ্ধ হবে ততই যেন কারো না কারো লাভ। কি অমানবিক এ এক ভয়ানক জাতি! একটি টেটা যখন একজন মানুষের বুকে, মাথায় কিংবা উরুতে বিদ্ধ হয় এবং ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে অপারেশন করার ৩ মাস পর যখন সে ভাল হয়ে গ্রামে ফিরে তারপর বাকী জীবন কি সে আর মানসিক ভাবে সুস্থ্য হতে পারে? যারা মারা যায় তারা তো বেঁচে যায়। কিন্তু যারা পঙ্গু হয় তারা সারা জীবন কেমন থাকে তা কি কেউ ভেবে দেখে?
এই টেটা যুদ্ধ বাংলাদেশ থেকে ১ দিনে একেবারে বন্ধ করে দেয়া সম্ভব। সরকার শুধু ঘোষনা করবে যে, ঐ এলাকার যার বাড়িতে টেটা পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হবে। প্রয়োজনে টেটার নিষিদ্ধের আইন করতে হবে। যারা টেটা বানানোর কাজ করবে তাদের সাথে সাথে গ্রেফতার করবে পুলিশ। দুই জেলার দুই দক্ষ পুলিশ সুপারই যথেষ্ট টেটা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। এমন দক্ষ পুলিশ সুপার অনেক আছে এ দেশে। তাঁদের কাজে লাগিয়ে কাজটা সফলভাবে শেষ করার পর রাষ্ট্র তাঁদের সস্মান সূচক পদক দিলে ক্ষতি কি? কয় টাকা খরচ হবে তাতে? গ্রাম্য টেটা যুদ্ধের বর্বরতার খবর যখন দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয় তখন এ দেশের সবারই ইজ্জতহানী হয়। অথচ যারা টেটা দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা মনে মনে বিজয়ের খুশীতে হাসে!
এই টেটা যুদ্ধ বাংলাদেশ থেকে ১ দিনে একেবারে বন্ধ করে দেয়া সম্ভব। সরকার শুধু ঘোষনা করবে যে, ঐ এলাকার যার বাড়িতে টেটা পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হবে। প্রয়োজনে টেটার নিষিদ্ধের আইন করতে হবে। যারা টেটা বানানোর কাজ করবে তাদের সাথে সাথে গ্রেফতার করবে পুলিশ। দুই জেলার দুই দক্ষ পুলিশ সুপারই যথেষ্ট টেটা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। এমন দক্ষ পুলিশ সুপার অনেক আছে এ দেশে। তাঁদের কাজে লাগিয়ে কাজটা সফলভাবে শেষ করার পর রাষ্ট্র তাঁদের সস্মান সূচক পদক দিলে ক্ষতি কি? কয় টাকা খরচ হবে তাতে? গ্রাম্য টেটা যুদ্ধের বর্বরতার খবর যখন দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয় তখন এ দেশের সবারই ইজ্জতহানী হয়। অথচ যারা টেটা দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা মনে মনে বিজয়ের খুশীতে হাসে!