তেলবাজ

প্রথমেই আসা যাক তেলবাজ কারা? তেলবাজ হল সেই ব্যক্তি- যে লাভের আশায় যাদের পিছনে তেল খরচ করলে লাভ হবে, তাদেরকে তেল মারতে মারতে পিছলা বানাইয়া ফেলে। তাতে করে তাকে বাদ দিয়ে তার প্রতিদ্বন্দিরা ঐ ব্যক্তিকে ধরার আগেই সে পিচলাইয়া যায় আর তেলবাজ কাঙ্খিত কলা খাইতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সফলতার চরম শিখরে আরোহন করে। তারপর থেকে সে নিজেই অন্যদের তেলদ্বারা নিজে পিছলা হয়ে যায়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অথবা যে ব্যক্তি ভাল মন্দ নির্বিশেষে ঐ ব্যক্তির প্রসংশা করে, যার কাছে তার স্বার্থ আছে সেই ব্যক্তিই তেলদান কারী।
তেলমারা তেলবাজ | আমির হোসেন
তেলবাজরা আমাদের সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিরাজমান। যেমন ধরা যাক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি বিভাগের প্রতিটি সেশনেই থাকে কিছু তেলবাজ ছাত্র। তারা বিভাগের কিছু শিক্ষক আছে যারা তেল পেতে পছন্দ করে। তাদের তেল মেরে মেরে তৈলাক্ত করে ফেলে। তাতে তাদের ফলাফল যোগ্যতার তুলনায় অনেক ভাল হয়। যে শিক্ষক তেলে তৈলাক্ত হতে পছন্দ করে সেই শিক্ষকও তেল মেরে প্রথম হইছে, তারপর শিক্ষক। যে তেল মারছে সেও এক সময় শিক্ষক হয়ে তেলে তৈলাক্ত হবে। যারা তেলে তৈলাক্ত হয় তাদের আবার নীতি ভাল আছে। তারা কেবল উপযুক্ত একজনের তেলেই তৈলাক্ত হয়। ঐ উপযুক্ত একজনের মত যদি আরেকজন উপযুক্ত তেলারো ঐ শিক্ষককে তেল মারতে যায়, তবে সে সেই শিক্ষককে ধরতে পারে না। কারন প্রথম জনের তেলেই সে তৈলাক্ত হয়ে যায় তাই ২য় তেলারো ধরতে গেলেই পিছলাইয়া যায়। যে তেল মেরে শিক্ষককে তৈলাক্ত করতে পারে, তাকে আবার অন্য কিছু ছাত্র তেল মারে। তাতে করে তাদের ফলাফলও ভাল হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন অযোগ্য ছাত্রও তেলের প্রভাবে প্রথম হয়ে শিক্ষক হয়ে যাচ্ছে। তেল মেরে যে শিক্ষক হলো, সে তেল মারা ছাড়া আর কি শিখাতে পারবে? তা আমার বোধগম্য নয়। এই তেল প্রক্রিয়ার জন্য সাধারন শিক্ষার্থীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে। এই পক্রিয়া এইভাবে চলতে থাকলে জাতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বড় বড় চিহ্ন যুক্ত প্রশ্ন।
এই তেল আপনি আমি ইচ্ছা করলেই মারতে পারি না। তেল মারার জন্য বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। যেমন তার কয়েকটি হলঃ

১। তেলবাজ হওয়ার ১ম শর্ত নিজের সম্মানবোধ এটা থাকতে পারবে না।
২। লজ্জা শরমের মাথা পানি দিয়ে ধুয়ে খেয়ে ফেলতে হবে।
৩। হয়ত টয়লেট পরিষ্কার করে দিতে হতে পারে এতে পিছপা হলে চলবে না।
৪। যাকে তেল মারবে তার যতটা সম্ভব কাছাকাছি থাকতে হবে।
৫। যত কষ্টের কাজই হোক আপনার করতে হবে, কারন তার পরেই আপনার জন্য সফলতা অপেক্ষা করছে।
৬। মাঝে মাঝে নিজের প্রসংশাও করবে হবে। আমি এটা পারি, সেটা পারি ইত্যাদি বলতে হবে। যদিও অনেক কিছুই পারি না।
৭। অন্যদের দোষগুলো তুলে ধরে নিজেকে দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা হিসেবে জাহির করতে হবে।
৮। অন্য কেউ এসে যেন আপনার জায়গা দখল করতে না পারে, সেজন্য এমন কিছু ফর্মূলা এপ্লাই করতে হবে। যাতে অন্যরা খারাপ এটা ফুটে ওঠে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form