তিলে থেকে তেল হয়, কৈয়ের তেলে কৈ ভাজা, তেলা মাথায় তেল দেওয়া। এক তেল নিয়ে কম রঙ্গ হয়নি এই বঙ্গ দেশে। এখনও যে হচ্ছে না তা নয়। আগের চেয়ে বেশিই হচ্ছে। তবে তেল এখন শুধু আর রঙ্গ নয়, এটি আমাদের দেহ ও সমাজের একটি অঙ্গ। সময়টাই এখন তেলের। চারদিকে শুধু তেল, তেল আর তেল। একটু ভালভাবে তাকালেই দেখা যায় সবার গা থেকে থেকে এখন ঘাম নয়, ফোঁটায় ফোঁটায় তেল ঝরছে। আমরা সবাই এখন একেকটি তেলের বিশাল বিশাল আধার। আর কিছু নয়, সর্বোৎকৃষ্ট জায়গায় কিভাবে তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় তা জানার জন্যই আমরা সবাই এখন হন্যে হয়ে ছুটছি। তেল মারতে মারতে একেকজনের গায়ের চামড়া তুলে ফেললেও আমরা ক্ষান্ত হইনা। উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত খুঁজতে থাকি আর কাকে তেল মারা যায়।
কান পাতলেই আমরা এখন দুই শব্দের একটা বাক্যই শুধু শুনি। তেল মার, তেল মারো এবং তেল মারুন। বাবা সন্তানকে বলে তেল মারে, মা সন্তানকে বলে তেল মারে, বন্ধু-বন্ধুকে বলে তেল মারে, আত্মীয় আত্মীয়কে বলে তেল মারে, শিক্ষক ছাত্রকে বলে তেল মারে, প্রেমিক-প্রেমিকাকে বলে তেল মারে, স্ত্রী স্বামীকে বলে তেল মারে, স্বামী স্ত্রীকে বলে তেল মারে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে বলে তেল মারুন, সহকর্মী সহকর্মীকে বলে তেল মারুন। আরেকটু এগোলে এর পাশে আরও দু’টি শব্দ শুনি, তেল মারুন জীবন গড়ুন। আরও শুনি, তেলেই শক্তি তেলেই মুক্তি। তেলই এখন সত্য, তেলই এখন ধর্ম। আমরা সবাই এই তেলের বশ্যতা স্বীকার করেছি। ব্রিটিশরাজকে তেল মারতে শিখে আমরা এ তৈলবিদ্যাটি আমাদের রক্তে, মাংসে, অস্থি, মজ্জাতে মিশিয়ে ফেলেছি। আমাদের মনোজগতে এখন শুধু তেল। তেল ছাড়া আমরা ভাবতে পারিনা, কথা বলতে পারিনা, চলতে পারিনা, অর্জণ করতে পারিনা, কিছু পারিনা। এক তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করে। তবে এর আগে ও পরে ব্যবহার করে আসল তেল। মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বিশ্ববাসীকে এই তেল মারে তারা। উদ্দেশ্য আক্রমনটাকে হালাল করা।
প্রকৃতপক্ষেই এখন তেল, তেলবাজদের জয়জয়কার। ইরাকের মতো তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্র যেমন পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের মতো লোভনীয়, তেমনি তেল মারতে জানা লোকও এখন পরম কাক্ষিত। তেল মারতে না জানা লোক ছাড়া এখন কিছু হয়না। পেশাও হয়ে উঠেছে এখন তেল নির্ভর। মেডিকেল রেপ্রিজেন্টিটিভ, ব্যাংক, বীমা ও ইন্সুরেন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানির এক্সিকিউটিভ অফিসাররা তাদের অগ্রদূত। এদেরকে দিয়ে প্রত্যক্ষ তেল মারা ছাড়াও তেল ব্যবহারের আরও মাত্রা রয়েছে। অফিস ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ঝকঝকে তকতকে রাখা, পণ্যের মান যাই হোক না কেন, আকর্ষণীয় মোড়ক ব্যবহার করা। বিজ্ঞাপন দেওয়া সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই কাস্টমারদের তেল মারা। তেলের এ যুগে তেল ছাড়া প্রেম হয়না, প্রেম টিকিয়ে রাখা যায় না, চুমো খাওয়া যায় না, সঙ্গম করা যায় না, বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না, চাকরি হয়না, হলেও টিকিয়ে রাখা যায় না, ট্রেণের টিকিট পাওয়া যায় না, ডাকপিয়ন টাকা দেয়না, মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় না। এমনকি ঘড়ি ধরে ধরে তেল না মারলে বিশাল দয়ালু বিধাতার বিন্দু পরিমান দয়াও পাওয়া যায় না। তেল এমনই এক যাদুকরী টোটকা যে, এর মাধ্যমে সব হয়। এই তেল মারা মানে তেল ঝড়ে ঝড়ে পড়া হাসিযুক্ত পা চাটা।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষকরা আমাদের প্রতিনিয়ত এই তেল মারাই শেখাচ্ছেন। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতির জন্য, ভিসি-প্রোভিসি হওয়ার জন্য গন্ডমূর্খ এমপি-মন্ত্রীদের পা চাটার মাধ্যমে তেল মারতেও তারা দ্বিধা করেন না। আমরা দেখছি এবং শিখছি। এসব মহান শিকদের প্রণীত পাঠ্যসূচী এবং নিয়ম-কানুনও আমাদের তেল মারার শিক্ষাই দেয়। "আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে"। ছোটবেলায় শেখা আপাত নির্দোষ এ বুলিটি যে তৈলবিদ্যা শেখারই নামান্তর তা আমরা একটু চিন্তা করলেই বুঝি। এর মানে যে মহাজনদের যেকোন কথা হাসিমুখে মেনে নেয়া- তেল দেয়া তা আমরা বুঝি। পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা। স্বাধীনতা হরণকারী এ বুলিটির আড়ালের কথাটা যে সময়মতো অফিসে যাও এবং মহাজনের কথামতো কাজ করো মানে তেল মারো, তা আমরা সহজেই বুঝি। কিংবা "লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে"। মানে জ্ঞানার্জণ নয় পড়ালেখার উদ্দেশ্য একটাই তাহলো গাড়ি-ঘোড়া চড়া। সেটা যেভাবেই হোক। কারো পা চেটে হলেও। তারপর ইস্ত্রি করা শার্ট-প্যান্ট পড়া, ক্লিন শেভড থাকা, কোট-টাই পড়া শেখার মাধ্যমে আমরা তৈলবিদ্যাই শিখি। নিজেদেরকে কোম্পানিগুলোর এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে যোগ্য করে তুলি। আমরা এসব শিখি এবং তৈলবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠি। এ তৈলবিদ্যা যে যত বেশি আয়ত্ব করতে পারি, জীবনে সে ততটাই উন্নতি করি। আমরা বিশ্বাস করতে শিখি তেলহীন বিদ্যা ফুঁটো পয়সার মতোই অচল।
আমাদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, অস্তিত্ব, সমাজ, সংসার, আকাশ, বাতাস, চাঁদ, জোৎস্না, সূর্য এখন তেল নির্ভর হয়ে পড়েছে। অন্যকে কিভাবে তেল মারা যায় তার কায়দা কানুন জানতেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে শাণিত করতে নিজেকে তেল মারার কথা আমরা চিন্তাও করিনা। তেলখেকো বাজারি কুকুরের গায়ে যেমন লোম থাকে না, সর্বত্র এভাবে তেল মারামারির ফলে আমাদের সমাজ সংসারও আজ লোমহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের বিচার বুদ্ধিতে জট লেগেছে মরিচা ধরেছে। তবে মরিচা সারাতেও কিন্তু তেল লাগে। এটা যে কোন তেল তা আমরা জানি। কিন্তু এখানে আমরা তা মারি কি?
কান পাতলেই আমরা এখন দুই শব্দের একটা বাক্যই শুধু শুনি। তেল মার, তেল মারো এবং তেল মারুন। বাবা সন্তানকে বলে তেল মারে, মা সন্তানকে বলে তেল মারে, বন্ধু-বন্ধুকে বলে তেল মারে, আত্মীয় আত্মীয়কে বলে তেল মারে, শিক্ষক ছাত্রকে বলে তেল মারে, প্রেমিক-প্রেমিকাকে বলে তেল মারে, স্ত্রী স্বামীকে বলে তেল মারে, স্বামী স্ত্রীকে বলে তেল মারে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে বলে তেল মারুন, সহকর্মী সহকর্মীকে বলে তেল মারুন। আরেকটু এগোলে এর পাশে আরও দু’টি শব্দ শুনি, তেল মারুন জীবন গড়ুন। আরও শুনি, তেলেই শক্তি তেলেই মুক্তি। তেলই এখন সত্য, তেলই এখন ধর্ম। আমরা সবাই এই তেলের বশ্যতা স্বীকার করেছি। ব্রিটিশরাজকে তেল মারতে শিখে আমরা এ তৈলবিদ্যাটি আমাদের রক্তে, মাংসে, অস্থি, মজ্জাতে মিশিয়ে ফেলেছি। আমাদের মনোজগতে এখন শুধু তেল। তেল ছাড়া আমরা ভাবতে পারিনা, কথা বলতে পারিনা, চলতে পারিনা, অর্জণ করতে পারিনা, কিছু পারিনা। এক তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করে। তবে এর আগে ও পরে ব্যবহার করে আসল তেল। মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বিশ্ববাসীকে এই তেল মারে তারা। উদ্দেশ্য আক্রমনটাকে হালাল করা।
প্রকৃতপক্ষেই এখন তেল, তেলবাজদের জয়জয়কার। ইরাকের মতো তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্র যেমন পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের মতো লোভনীয়, তেমনি তেল মারতে জানা লোকও এখন পরম কাক্ষিত। তেল মারতে না জানা লোক ছাড়া এখন কিছু হয়না। পেশাও হয়ে উঠেছে এখন তেল নির্ভর। মেডিকেল রেপ্রিজেন্টিটিভ, ব্যাংক, বীমা ও ইন্সুরেন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানির এক্সিকিউটিভ অফিসাররা তাদের অগ্রদূত। এদেরকে দিয়ে প্রত্যক্ষ তেল মারা ছাড়াও তেল ব্যবহারের আরও মাত্রা রয়েছে। অফিস ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ঝকঝকে তকতকে রাখা, পণ্যের মান যাই হোক না কেন, আকর্ষণীয় মোড়ক ব্যবহার করা। বিজ্ঞাপন দেওয়া সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই কাস্টমারদের তেল মারা। তেলের এ যুগে তেল ছাড়া প্রেম হয়না, প্রেম টিকিয়ে রাখা যায় না, চুমো খাওয়া যায় না, সঙ্গম করা যায় না, বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না, চাকরি হয়না, হলেও টিকিয়ে রাখা যায় না, ট্রেণের টিকিট পাওয়া যায় না, ডাকপিয়ন টাকা দেয়না, মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় না। এমনকি ঘড়ি ধরে ধরে তেল না মারলে বিশাল দয়ালু বিধাতার বিন্দু পরিমান দয়াও পাওয়া যায় না। তেল এমনই এক যাদুকরী টোটকা যে, এর মাধ্যমে সব হয়। এই তেল মারা মানে তেল ঝড়ে ঝড়ে পড়া হাসিযুক্ত পা চাটা।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষকরা আমাদের প্রতিনিয়ত এই তেল মারাই শেখাচ্ছেন। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতির জন্য, ভিসি-প্রোভিসি হওয়ার জন্য গন্ডমূর্খ এমপি-মন্ত্রীদের পা চাটার মাধ্যমে তেল মারতেও তারা দ্বিধা করেন না। আমরা দেখছি এবং শিখছি। এসব মহান শিকদের প্রণীত পাঠ্যসূচী এবং নিয়ম-কানুনও আমাদের তেল মারার শিক্ষাই দেয়। "আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে"। ছোটবেলায় শেখা আপাত নির্দোষ এ বুলিটি যে তৈলবিদ্যা শেখারই নামান্তর তা আমরা একটু চিন্তা করলেই বুঝি। এর মানে যে মহাজনদের যেকোন কথা হাসিমুখে মেনে নেয়া- তেল দেয়া তা আমরা বুঝি। পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা। স্বাধীনতা হরণকারী এ বুলিটির আড়ালের কথাটা যে সময়মতো অফিসে যাও এবং মহাজনের কথামতো কাজ করো মানে তেল মারো, তা আমরা সহজেই বুঝি। কিংবা "লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে"। মানে জ্ঞানার্জণ নয় পড়ালেখার উদ্দেশ্য একটাই তাহলো গাড়ি-ঘোড়া চড়া। সেটা যেভাবেই হোক। কারো পা চেটে হলেও। তারপর ইস্ত্রি করা শার্ট-প্যান্ট পড়া, ক্লিন শেভড থাকা, কোট-টাই পড়া শেখার মাধ্যমে আমরা তৈলবিদ্যাই শিখি। নিজেদেরকে কোম্পানিগুলোর এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে যোগ্য করে তুলি। আমরা এসব শিখি এবং তৈলবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠি। এ তৈলবিদ্যা যে যত বেশি আয়ত্ব করতে পারি, জীবনে সে ততটাই উন্নতি করি। আমরা বিশ্বাস করতে শিখি তেলহীন বিদ্যা ফুঁটো পয়সার মতোই অচল।
আমাদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, অস্তিত্ব, সমাজ, সংসার, আকাশ, বাতাস, চাঁদ, জোৎস্না, সূর্য এখন তেল নির্ভর হয়ে পড়েছে। অন্যকে কিভাবে তেল মারা যায় তার কায়দা কানুন জানতেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে শাণিত করতে নিজেকে তেল মারার কথা আমরা চিন্তাও করিনা। তেলখেকো বাজারি কুকুরের গায়ে যেমন লোম থাকে না, সর্বত্র এভাবে তেল মারামারির ফলে আমাদের সমাজ সংসারও আজ লোমহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের বিচার বুদ্ধিতে জট লেগেছে মরিচা ধরেছে। তবে মরিচা সারাতেও কিন্তু তেল লাগে। এটা যে কোন তেল তা আমরা জানি। কিন্তু এখানে আমরা তা মারি কি?