ইন্দুমতি

ছোট থেকে শুনে বড় হওয়া ভাগ্য নয় তো ভালো,
সহজ সরল গাঁয়ের মেয়ে জন্ম থেকেই কালো।
সকাল সন্ধ্যা ঘরের কাজে আঙুল ছোঁয়নি বই,
সংসারে বাবা একা রোজগারের টাকার যোগান কৈ?
এক বিঘা জমি বেঁচে করিলেন বিয়ের পণ।
বিয়ের পরে স্বামীর কাছেই তার সমর্পিত মন।
স্বামী শহরের রাজমিস্ত্রি উদয় অস্ত কাজ,
রাতেরবেলা মদের নেশায় গায়ে তোলে হাত।
স্বামীর গায়ের গন্ধ মাখে পাশের পাড়ার সন্ধ্যা,
তিন বছরেও নাতি না হলে শ্বাশুড়ি ডাকে ''বন্ধ্যা''।
রইল না তার স্বামীর সংসার দেয় না কেউ ভাত,
মা বাবাও তাড়িয়ে দিল ঠিকানা তার ফুটপাত।
বাবুদের বাড়ি বাসন মেজে আঙুলে ধরেছে হাজা,
একটি শব্দই কুরে কুরে খায়- সত্যি কি সে ''বাজা''?
একদিন এক গাড়ি এসে থামে মাঝরাতে ফুটপাতে,
মুখে কাপড় গুঁজে তুলে ফেলল বিলাসিতার খাটে।
বাঁধ সাধল না গায়ের রঙও থামল না ওরা প্রতিবাদে,
দেহখানা শোষণ করল মিটিয়ে নিল যৌনতার খিদে।
জ্ঞান ফিরল ভোরের দিকে গায়ে ভিষন জ্বর,
শুনতে পেল কেন যেন বলে- ''ওঠ, মনকে শক্ত কর''।
কাঁপা কাঁপা পায়ে দাঁড়ালো উঠে ফিরতে হবে ঘরে,
বাবুদের বাড়ি কাজে না গেলে ভরবে পেট কি করে?
এই ভাবে তার দিন চলে যায় মাসের পর মাস,
ইন্দুমতির দেহে বাসা বাঁধে শরৎকালের কাশ।
দশ মাস যন্ত্রণাগুলো সয়ে কোলে আসল ছেলে,
ইন্দুমতি ''বন্ধ্যা'' যে নয়- বলবে শ্বাশুড়ির দেখা পেলে।
এমন অনেক অনেক ইন্দুমতি ছড়িয়ে কোণে কোণে।
সন্দেহ, নিন্দা ঝেড়ে ফেলে ভরসা জাগাও মনে।
poor-mother ইন্দুমতি | আমির হোসেন

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form