নারী মা জাতি

ধর্মমানুষকে নারী ও পুরুষ ভিন্ন সত্তায় সৃজন না করলে হয়তো মানববংশই বিস্তার লাভ হতো না। সৃষ্টির আদি থেকে নারীর প্রতি পুরুষের এবং পুরুষের প্রতি নারীর রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। উভয়ের বৈবাহিক সম্পর্ককে পারিবারিক স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য প্রদত্ত হয়েছে পারস্পরিক ভালোবাসা। যার প্রয়োজনে নারী ও পুরুষের সৃষ্টিতে সুন্দর কাঠামোতে অবয়ব ও বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে আল্লাহর কাছে নারী বা পুরুষ বলে আলাদা কিছু নেই। পুরুষের বেশি মর্যাদা আর নারীর কম মর্যাদা এমনটি নয়।
ধর্মমানুষকে নারী ও পুরুষ ভিন্ন সত্তায় সৃজন না করলে হয়তো মানববংশই বিস্তার লাভ হতো না | আমির হোসেন

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন- হে মানুষ! আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, পরে তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক মুত্তাকি। আরব বিশ্বে যখন নারীদের কোনো সম্মান ও মর্যাদা ছিল না, যখন পুরুষেরা তাকে শুধুই ভোগের জন্য ব্যবহার করত। তখন মেয়ে শিশু জন্ম গ্রহণকে অপমানজনক মনে করে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। তখন মহানবী (সাঃ) নারী ও পুরুষের প্রাপ্য মর্যাদার কথা বললেন। পরিবারে মেয়ে শিশুর প্রতি কোনো রকম তাচ্ছিল্য প্রদর্শন, ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য বিধান এবং মেয়েদের ওপর ছেলেদের অহেতুক প্রাধান্য দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- যার তত্ত্বাবধানে কোনো মেয়েশিশু থাকে আর সে তাকে জীবিত দাফন না করে, মেয়েকে তুচ্ছ না করে এবং ছেলেকে অগ্রগণ্য না করে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে পোশাকের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, পোশাকের সঙ্গে দেহের সম্পর্ক যত নিবিড়, আদর্শ পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ততটাই নিবিড় হওয়া চাই। ইসলাম পরিবার ও সমাজে নারীর ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। নারীদের উদ্দেশে শিক্ষামূলক ভাষণ দিয়ে মহানবী (সাঃ) বলেছেন- প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্যই জ্ঞানার্জন করা ফরজ। প্রয়োজনে নারীরা ঘরের বাইরে গমন, সমাজকল্যাণ, জাতিগঠন ও উন্নয়নমূলক কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এমনকি দেশের প্রতিরক্ষায় যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। নারীকে ঘরের বাইরে যেতে হবে বলেই ইসলাম তার সম্ভ্রম ও নিরাপত্তার জন্য পর্দার ব্যবস্থা করেছে। জীবিকা অর্জন ও প্রয়োজনের তাগিদে নারীদের বহির্গমনের আদেশ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বামীর সংসারে গৃহকর্ত্রী হিসেবে নারীর ভূমিকা নির্ধারণ করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিণী। পিতা যেহেতু বাইরে চাকরি বা ব্যবসার কাজে কর্মব্যস্ত, সেহেতু মুসলিম পরিবারে সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া ও চরিত্র গঠন করার মতো গুরুদায়িত্ব মাতাকেই পালন করতে হয়। সন্তানকে সুস্থ ও সৎমানুষ রূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের অবদানকে অম্লান করতে মানবসমাজ ও পরিবারে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করেছেন- মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। সমাজ, সংসারে যদি নারীর বুদ্ধিমত্তা ও প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং সন্তানসন্ততি শিক্ষিত, ভদ্র-নম্র ও সৎ চরিত্রবান হয়, তবেই তা একটি আদর্শ পরিবার। পরিবারে নারী ও পুরুষ উভয়ে নিজ নিজ বলয়ে একে অপরের বন্ধু ও সঙ্গীসাথি হয়ে সমাজ, সংসারে যৌথভাবে কাজ করবে। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য যেকোনো উপায়ে প্রাপ্ত অর্থবিত্তে নারীর ইচ্ছেমতো ব্যয় করার একচ্ছত্র অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। সম্পদে নারীর অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন- পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রতিটির জন্য আমি উত্তরাধিকারী করেছি এবং যাদের সঙ্গে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, তাদেরকে অংশ দেবে। আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলাম নারী জাতির যথাযথ অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে। বর্তমান সমাজে কিছু বখাটে লোক নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, অসম্মান ও অমর্যাদা করছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার, মোহরানার অধিকার, দাম্পত্য অধিকারসহ ইসলাম প্রদত্ত নারী জাতির বিভিন্ন অধিকার রক্ষায় এবং নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌতুক প্রভৃতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও মেয়ে শিশুর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিকভাবে গণসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি।

আজকাল একটা কথা একটু বেশিই শোনা যায়, নারী হল মা জাতি। এই কথাটা মেয়েরা খুব সুন্দর ট্রলপিকও তৈরী করে ফেলেছে। আর গর্ব করে এই একটা কথাই বলে- "নারী হল মা জাতি"। কথাটা হলো কোন ছেলেরা যদি বলে- সব মেয়েরা খারাপ, তাহলে তারা বলে- সব মেয়েরা খারাপ হয় তাহলে তার মধ্যে তোর মাও পরে। কথাটা সম্পুর্ন ভুল, মেয়ে জাতি খারাপ হতে পারে কিন্তু মা জাতি না। প্রত্যেকটা মেয়ে মা হয় কখন, যখন তার সন্তান পৃথিবীতে আসে এর আগ পর্যন্ত সে একটা মেয়ে হিসেবে থাকে। আর তখন সে খারাপ কাজ করতে পারে কিন্তু যখন মা জাতিতে পরিনত হন তখন তিনি খারাপ কাজ করার আগে কয়েকবার ভেবে কাজ করেন। যাতে তার সন্তানের ক্ষতি হয় বা তার কারনে তার সন্তান লাঞ্চিত না হয়। কিন্তু একজন মা হওয়ার আগ পর্যন্ত তার এই চিন্তা থাকে না। তাই খারাপ কাজ করতে কোন দিদ্ধাবোধ করে না। তার দ্বারা যেকোন কাজ করা সম্ভব কিন্তু একটা মায়ের দ্বারা অতিসহজে সম্ভব না। যদি না সে একান্ত অসহায় হয়ে না পড়ে। মা জাতি মহান, তার ধারে কাছেও মেয়ে জাতি ভিরতে পারবে না। মা জাতিই হলো নারীদের আসল ও প্রকৃত রূপ। এটাই চূড়ান্ত যে সে কারো মা, কারো বোন, কারো বউ, কারো কন্যা,কারো ভাবি। কিন্তু যখন সে মেয়ে হিসেবে থাকে তখন শুধু কারো মেয়ে অথবা কারো বোন হিসেবে থাকে। মেয়ে মহিলা, মহিলা মা আর মা-ই হলো একজন নারী। অনেক জায়গায় আছে নারী জাতি মহান। তাই বলে সবাই একটা মেয়ে দোষ করলে নারী জাতির মহানতার উপর কালো দাগ জুড়ে দেয়। কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত এটাই বুঝে উঠতে পারল একটা মেয়ে নারী রূপের প্রথম ধাপ। তাই সে দোষ করলে পুরো নারী জাতির উপর আজ্ঞুল তোলা যায় না। নারী জাতির উপর কিছু বলার সকল নারী মা একটু ভেবে বলবেন তা আপনার মার উপরেও যাচ্ছে। কিন্তু যেই মেয়েই এটা দাবি করবে সে খারাপ হলে আপনার মাও খারাপ তাহলে তাকে চোখে আজ্ঞুল দিয়ে জিনিসটা বুঝিয়ে দিন যে, তোমরা তো সবে নারীর প্রথম ধাপ। আর আমার মা নারীর চূড়ান্ত রূপ। তাই তোমরা নিজেকে আমার মার সাথে তুলনা করে নারী জাতিকে ছোট করো না। একজন বিবেকবান ও চিন্তাশীল মানুষের কাছে এতটুকুই যথেষ্ট। জীবন ও জগৎ নিয়ে নিজেদের মনে নানা রকম প্রশ্ন আসাটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তবে এমন কিছু বলতে নেই, যাহার কোন বৃত্তি নেই।

শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো 'মা'
প্রতিটি সন্তানের জন্য দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো 'মা'। সন্তানের কাছে মা সব সময় মমতাময়ী। মা ও সন্তানের নাড়ির সম্পর্ক চিরন্তন, শাশ্বত। জন্মের পরই মায়ের দুধ পানের মধ্য দিয়ে সন্তানের এনিবিড় বন্ধনের সূচনা। কোনো কিছু দিয়েই এ সম্পর্ককে নিরূপণ করা যায় না। মা ছোট্ট একটি দুই অক্ষরের শব্দ। অথচ কি অসীম আকর্ষণীয় ক্ষমতা। সর্বংসহা মা। ধরিত্রীর মতোই পৃথিবীর সব শোক, দুঃখ,ব্যথা, বেদনা সইবার ক্ষমতা থাকে সব মায়েরই। সবার মনে সুখ আর আনন্দ দেয়াই যেন তাদের কাজ। সন্তান যত অপরাধই করুক, যত অসম্মানই করুক, করুক না যত নিষ্ঠুর আচরণ, তবু মা কিন্তু তার আসন থেকে নড়তে পারেন না একবিন্দুও। সন্তানের ভুলগুলো মা দেখেন ক্ষমার চোখে। মা হচ্ছেন এমনই। মা যেন শুধুই কষ্ট পাওয়ার জন্য, দেয়ার জন্য নয়। সন্তানদের সব বিপদ-আপদ, ঝড়-ঝাপটা থেকে রক্ষা করে। সব ভালো জিনিসের মূর্ত প্রতীক হচ্ছে, মা।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form