জাহেলি যুগে আরবদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা ছিল অতি শোচনীয়। ইতিহাসে আরবদের ১০০ বছর স্থায়ী যুদ্ধের কাহিনী রয়েছে। আর এসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আরবে শাসনব্যবস্থা না থাকায়, সে সময় গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-কলহ এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। এ গোত্র-কলহ কখনো বংশানুক্রমিকভাবে চলতো। ‘‘খুনের বদলে খুন’’ এ ধারায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো বছরের পর বছর। আরবে গোত্রীয় দ্বন্দ্বের কারণে ১ হাজার ৭০০ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বুয়াসের যুদ্ধ, ফিজারের যুদ্ধ, বসুসের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে ছিলো উল্লেখযোগ্য। উটকে পানি খাওয়ানোর মতো সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনু বকর ও বনু তগলিব গোত্রের মধ্যে ৪০ বছর যুদ্ধ হয়ে ছিলো। অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে যুদ্ধ চলত বছরের পর বছর। ঠিক সেই জাহেলি যুগের দৃশ্য আমরা এখন দেখতে পাই আমাদের জন্মভূমিতে।
গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষে জড়ানো রীতিমতো ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। পান থেকে চুন খসলেই দা, লাঠি, টেটা, ফলা ও বল্লমের মতো দেশীয় মারণাস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুইপক্ষ। যুগ যুগ ধরে চলা এসব গ্রাম্য সংঘর্ষে প্রাণ যাচ্ছে ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেক মানুষ। আজ আমরা এতটাই বর্বর হয়ে গেছি যে, মানুষকে মানুষ বলেই মনে করছি না। অথচ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু এই মানুষই আবার কর্মের কারণে বর্তমান সময়ে সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব বলে পরিগণিত হচ্ছে। যে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকে না, তাকে মানুষ বলা যায় না। মানুষ বলতে মানুষের ভেতর মানবীয় গুণ থাকতে হয়।