এক রাজ্যে দয়ালু এক রাজা ছিলেন। তার মহানুভবতার কথা অনেক রাজ্যের মানুষ জানতেন। বিপদে তার নিজ প্রজাদের যেমন সাহায্য করতেন তেমনি পাশের রাজ্যের প্রজারাও তার পরশ পেতে ছুটে আসতেন দূর দুরান্ত থেকে। এই রাজার একটি পোষা বানর ছিল। বানরটি তার সিংহাসনের পাশেই বাধা থাকতো। রাজা যখন সভায় আসতেন তখন'ই হাতের ছড়ি দিয়ে বানরকে একটা পিটুনি দিতেন। আবার যখন সভা ছেড়ে যেতেন তখনও একটা পিটুনি দিতেন।
একবার এক বিদেশী রাজার প্রশংসা শুনে দরবারে এলেন। কিন্তু দরবারে এসে দেখলেন, একি! বাইরে যার এতো প্রশংসা শুনে এলেন, সেই ন্যায়পরায়ন রাজাই কিনা ভেতরে ভেতরে এত নির্দয়! একপর্যায়ে মেহমান রাজাকে বিনয়ের সুরে বললেন- মহামান্য রাজা বেআদবি মাফ করিবেন, আপনি এত মহান, দয়ালু তার পরেও কেন একটি নিরীহ প্রভূভক্ত বানরকে সকাল বিকাল প্রহার করেন? রাজা মুচকি হেসে তাকে বললেন- এর উত্তর পেতে আপনাকে আমার দরবারে টানা কয়েদিন আসতে হবে। মেহমান রাজি হলেন। রাজা রাজসভা শেষ করলেন। পরদিন রাজা রাজসভায় এসে আগের মতো বানরকে কোন পিটুনি দিলেন না, বানরও স্বাভাবিক। এ দেখে মেহমান বেশ উচ্ছসিত। দ্বিতীয় দিন রাজা এলেন। আলাপ আলোচনার মধ্যে সবাই খেয়াল করলেন যে, বানরটি রাজার সিংহাসনের কিছুটা কাছাকাছি এসে বসলো। তৃতীয় দিন বানরটি আরও কাছে এলো। পরের দিন বানরটি সিংহাসনের হাতলের ওপরই উঠে বসলো। পঞ্চম দিন বানরটি রাজার কাঁধে উঠে বানরটি রীতিমত সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজার মাথার মুকুটের ওপরে উঠে বসলো। তার দুই কান আচ্ছামতো মুচড়ে দিতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে সবাই হই চই করে উঠলো। তারা এগিয়ে এলো, কিন্তু রাজা তাদের নিবৃত করলেন। মেহমানও কিছুটা লজ্জিত হলো। এবার রাজা মেহমানকে বললেন- “আপনি কি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন?” মেহমান বললেন- “আলবৎ পেয়েছি”। রাজা বললেন কি শিক্ষা পেলেন? মেহমান বললেন- বানরকে লাই দিলে মাথায় চড়ে বসে! তাই বানরকে কখনো লাই দিতে নেই।
Tags
গল্প