মাতাব্বর বাড়ি

মাতাব্বর বাড়ি

গ্রামের এক মাতাব্বর মশাইয়ের কাশির সাথে খুব ছোট পালকের মত কিছু একটা বের হয়ে এসেছিলো। এটা দেখে তো মাতাব্বর মশাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। খুব ভয় পেয়ে গেলেন তিনি। না জানি এটা কোথা থেকে আর কেমন করে তার পেটের মধ্যে গিয়ে ঢুকলো? তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। দুপুরে বাড়িতে গিয়ে খাবার খেয়ে মাতাব্বর মশাই দুশ্চিন্তার সাগরে ডুবে ডুবে পাখির পালক খুঁজতে লাগলেন, ভাবতে লাগলেন আর কাহিনী উদ্ধারের চেষ্টায় পড়ে গেলেন। তখন তার বিবিজান মানে তেনার গিন্নী সাহেবা তেনার মনমরা মুখ দেখে কিছুটা অবাক হইলেন। তার সোয়ামী সাধারনত এরকম হয়ে মনমরা থাকেন না। জিজ্ঞেস করলেন- "কি গো, আপনের মুখটা আইজকা অমন হুকনা ত্যানার মত হুকাইয়া রইছে ক্যান? কি হইছে, মাথা ঘুরাইতেছে? আমি তেল মালিশ করে দিই!"

বিবিজানের কথা শুইনা ত্যানা বদনে মাতাব্বর সাহেব বললেন- "না, মাথা ধরে নাই। আইজ একখান খারাপ ঘটনা অই গেছে। এখনো পর্যন্ত কাউরে কিছু কই নাই। তোমারে কইলে তুমি কাউরে কইবা না তো?"

গিন্নী সাহেবা বলিলেন- "আস্তাগফিরুল্লাহ। আপনের ইস্তিরিরে আপনে অবিশ্বাস করেন? স্বামীর গোপন কথা কি, কোন বউ কোনোদিন অন্য কাউরে কয়? আল্লার কিরা কইলাম আমি কাউরে কিছু কমু না।"

তারপরে মাতাব্বর মশাই তার গিন্নীকে এক নিঃশ্বাসে পালক সম্পর্কিত সমস্ত কাহিনী প্রকাশ করে তারপর এক মগ পানি ডগ ডগ শব্দে পান করে ইয়া বড় এক ঢেকুর দিয়ে হাঁফ ছাড়িলেন।

গিন্নী পালকের কাহিনী শুইনা কইলো- "ঠিক আছে, আমি কাউরে একথা কক্ষনো কমুনা।"

কিন্তু কাহিনী শুনার পর থেকে গিন্নী সাহেবের পেটের ভিতরে মোচরামুচরি শুরু হইয়া গেছে। কথাটা কোনোমতেই তার পেটের মধ্যে হজম হইতেছে না। কাউরে না বললে যেন তার শান্তি নাই। মেয়ে জাতির পেট বলে কথা।

সন্ধ্যায় গিন্নী পুকুর থেকে পানি আনতে গেল। আর সেখানে তার ছোটকালের সখী কাকুলির সাথে তার দেখা। এবার মাতাব্বরের গিন্নী আর কাকুলির ডায়লগ লাইভ শুনেন...

গিন্নীঃ কাকুলি, তুই হইলি আমার পরানের সঁই। আমি কি তোরে আমার পরাণের হগল কথা না কইয়া কখনো থাকবার পারি? ক...?

কাকুলিঃ ক্যান, কি হইছে কমলা বু...?

গিন্নীঃ কেমতে যে তোরে আমি কইতাম, হেইতেনে তো আমারে কসম দিয়া কাউরে কথাডা কইতে মানা কইরা দিছে।

কাকুলিঃ আরে কি কইবা তারাতারি কও তো। আর একটা দুইটা কসম ভাঙলে কিছু হয় না। আমি কত কসম ভাঙছি তার হিসাব নাই। তুমি নিশ্চিন্তে কইতে পারো...

অতঃপর মাতাব্বর সাহেবের গিন্নী সাহেবা কাকুলীকে ঘটনাটা গোপন রাখিবার শর্তে কাহিনী বর্ননা করিলেন। কাকুলি কাহিনী শুনে বলেন- "ঠিক আছে। আমি এই কথা জিন্দেগিতেও কাউরে কমু না। এমনকি কাক পক্ষীও আমার এই কথা কোনোদিন জানবার পারব না। দিন গিয়ে রাত হলো। রাত পেরিয়ে সকাল এলো। আর মাতাব্বর মশাইর ঘুম ভাঙলো। কিন্তু বাইরে শোরগোল মনে হইলো তার। লোকজনের শোরগোলের আওয়াজ শুনে মাতাব্বর মশাই ঘুম থেকে উঠে তার গিন্নীকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু তিনি গিন্নীর কোনো সাড়া শব্দ তিনি পাইলেন না। শোরগোল কেবল বাড়তে থাকলো।

এবার খেয়াল করেন...

গোপন কথাটা প্রথমে শুধু মাতাব্বর মশাই জানত। মাতাব্বর তার গিন্নীকে গোপন রাখার শর্তে তার গিন্নীকে জানালেন, আর গিন্নী থেকে কাকুলী, কাকুলী থেকে শ্যামলী, শ্যামলী থেকে নিলুফা, নিলুফা থেকে হনুফা, হনুফা থেকে তার স্বামী মফিজ, মফিজ থেকে তার ভাই রমিজ, রমিজ থেকে জব্বর। এভাবেই বাতাসের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে যে, গতকাল দুপুর থেকে নাকি মাতাব্বর মশাইয়ের মুখ দিয়ে নানান রঙ বেরঙের পাখি বেরুচ্ছে আর একের পর এক পাখি আকাশে উড়াল দিয়ে চলে যাচ্ছে। এরকম দৃশ্য দেখার জন্য সকালে মাতাব্বরের বাড়িতে মানুষের এত শোরগোল ছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form