শীতের সকালে ঘাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু শিশির কণা এক অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। শীত মানেই ঘন কুয়াশার সাথে সাথে প্রকৃতির সর্বত্র জমে থাকে মুক্তার মত বিন্দু বিন্দু শিশির কণা। সকালের ঘন কুয়াশা কেটে যখন ঈষৎ সূর্যালোক শিশির বিন্দুগুলোতে পড়ে, তখন প্রতিটি শিশির কণা যেন সোনার মত জ্বল জ্বল করতে থাকে। শীতের দিনে তাপমাত্রা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম থাকে। ফলে, ধীরে ধীরে যখন সূর্য অস্ত যেতে থাকে তখন পরিবেশের তাপমাত্রা আরও কমে যেতে থাকে। তাপমাত্রা কমতে থাকলে বাতাসের জলীয় বাষ্প আর বাষ্প আকারে থাকতে পারে না। এটি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে পানি-কণায় পরিণত হতে থাকে। কিন্তু বাতাসের এই পানি-কণা ধরে রাখার একটা ক্ষমতার সীমা আছে। সেই সীমা আবার বাতাসের তাপের উপর নির্ভর করে। বাতাস যদি বেশি গরম হয় তাহলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে আর যদি বাতাস ঠাণ্ডা হয় তবে কম জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে। যখন এসকল ঘনীভূত জলীয়বাষ্পের কণা আকারে অনেক বড় হয়ে যায়, তখন তা আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না এবং ধীরে ধীরে শিশির হয়ে ঝরতে থাকে। রাতে যখন সূর্যের তাপ থাকে না তখন পৃথিবী বাতাস থেকে তাপ শোষণ করে। এর ফলে বাতাসের তাপমাত্রা কমে যেতে থাকে। ফলে বাতাসের জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। রাত যত বাড়তে থাকে বাতাসের ততই জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে। এইভাবে তাপমাত্রা কমতে কমতে এক সময় বাতাস আর জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারে না। তখন জলীয় বাষ্প ফোটা ফোটা শিশির বিন্দু রূপে ঘাসের উপরে কিংবা পাতার উপরে ঝরতে থাকে। ঘাসের পাতার উপর সূক্ষ্ম রোম থাকে যা শিশিরবিন্দুকে ছড়িয়ে যেতে বাধা দেয় এবং শিশির বিন্দুকে গোলাকার দেখায়। আবার এমন নয় যে শুধু শীতকালেই শিশির পড়ে থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে শিশির জমার ঘটনাটি বেশি ঘটে থাকে। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও শিশির পড়তে পারে। তবে এটিও নির্ভর করে রাতের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপর। রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলে শেষ রাতের দিকে হালকা শিশির জমতে দেখা যায়। তবে সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এ শিশির পুনরায় বাষ্প হয়ে যায়। যে কারণে বছরের অন্যান্য সময় শিশির পড়লেও আমরা খুব একটা দেখতে পাই না। কিন্তু শীতকালে সকালে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকার কারণে জমে থাকা শিশির অনেকক্ষণ পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকে।
Tags
photography