মুখ দোষ

মুখ দোষ

মানব সংসারের চলার গতিময়তায় আচরনিক অনেক ভাষার দ্বারা মানুষ সহজাতভাবেই প্রভাবিত। বাগযন্ত্রের ইতিবাচক ব্যবহার যেমন যুগে যুগে মানুষকে মহিয়ান করেছে তেমনি নেতিবাচক ব্যবহার ও মানুষকে বিপথগামী করেছে। কিন্তু তারপরেও মানুষ আপন মনে শিক্ষা দীক্ষা, সভ্যতা ভব্যতা আর সংস্কৃতির হাওয়ায় গাঁ ভাসিয়ে নিজেদের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক বজায় রেখে আবহমানকাল থেকে বসবাস করে আসছে। সমাজ সভ্যতার দীর্ঘ পটভূমিতে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, মানুষ সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে মুখের কথার দ্বারা এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করেছে সেই মুখের কথা দ্বারা।  বিশ্লেষণ করলে যে বিষয়টি দৃশ্যমান হয় তা হল- কথা বার্তা বা মুখ নিঃসৃত বাণীর পরিমিত ব্যবহারের পরিবর্তে লাগামহীন ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার প্রবনতা মানুষের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাটে -বাজারে, অফিস-আদালতে, গল্প আড্ডায় তথা রাজনীতি- সামাজিক ময়দানে, সব জায়গায় অতিমাত্রায় বাক্যবাণের যে হিড়িক পড়েছে তা অনেকাংশে মুল্যবোধ আর নৈতিকতার মানদন্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এ বাচাল গোছের স্বভাবের মানবদের সংখ্যা যখন বেশি হয়ে যাচ্ছে তখন এদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রতিযোগী মনোভাবের এক মুহুর্তে দেখা যায়, বাক যোদ্ধারা পরস্পরকে ঘায়েল ও পরাজিত করার জন্য হাস্যরসিকতা, মিথ্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা, কুটচাল ও রাজনীতির পরিভাষা ব্যবহার ও উপহাস নির্ভর কথা বার্তার দিকে ক্রমশঃ ঝুঁকে পড়ছে যা কখনও কখনও পরনিন্দা ও গীবত হয়ে উদগীরন হচ্ছে। আর এ ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষেরা মাঝে মাঝে নিজের ঢোল নিজে নিজে পেটানোর খায়েশে ও কতিপয় গল্পের স্বাদকে বাড়িয়ে তোলার জন্য যে কোন বিষয়ের সাথে অহেতুক বানিয়ে বানিয়ে কথা সংযুক্ত করে বায়বীয় তথ্য বিস্ফোরণ করে থাকে। এমনকি নিষ্প্রয়োজনে কারও নিজস্ব কথায় যুক্ত হয়ে ব্যক্তি অধিকার ও স্বাধীনতা ভুলুন্ঠিত করার মাধ্যমে অনধিকার চর্চা করে বাহাদুরি মাতবর হিসেবে নিজেকে জাহির করে। কেউবা আবার রং ঢং করে কথা বলে অন্যের চোখের বালি হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে যেমন কখনও এমনও হয় যে, কোন লোক যদি মনে মনে তোমাকে ক্ষেত্র বিশেষ তার বিরক্তি বা অসুবিধার কারণ হিসেবে দেখে। কিন্তু, সে কইতেও পারেনা আবার সইতে ও পারেনা। অর্থাৎ পড়েছে এক মহাবিপদে। তখন সে কিন্তু ওৎ পেতে থাকে আর সে কোন সুযোগে যদি রঙ্গে ঢংয়ে তোমার সাথে তার কোন হালকা-ভারী রূঢ় আচরণ হয়, সে ঐ সুযোগে তোমার সাথে বৈরী আচরণ করা শুরু করে। ভালো কথায়, কাজে ত্রুটি খুঁজবে ইত্যাদি। এতে অনুসন্ধান করলে পরিষ্কার হয় যে, এটি ছিল তোমার সাথে তার পূর্বের শত্রুতা বা মনমালিন্যতা কিংবা তোমার প্রতি তার অসহ্যতারই এক বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ তুমি যেন তার পথের কাটা, তুমি যেন তার চোখের ঘুম কেড়ে নিচ্ছো ইত্যাদি। উল্লেখিত শিরোনামটি গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। যেটি হল-

মুখ দোষে মার গলে, আর গামছা বাইয়া প্রেম পড়ে

আসলে বিষয়টিকে সুক্ষ্মভাবে অনুধাবন করে এর মূলভাব সম্প্রসারণ করলে দেখা যায়, এতে মুখের দোষে অর্থাৎ অহেতুক, অনর্থক বাক্য বিনিময়কে বুঝানো হয়েছে। পরক্ষণে মার গলে মানে হল মায়ের গলায় অর্থাৎ জাতির গলে, জাতির নিশানায় বুঝানো হয়েছে। আর এ শিরোনামে গামছা বাইয়া প্রেম পড়ে বাক্যটি ব্যঙ্গার্থকভাবে বুঝানো হয়েছে। যেমন একটি মগের মধ্যে ২ লিটার পানি ধারনের সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু সেখানে যদি ৩ লিটার পানি রাখা হয় তাহলে সেই মগ থেকে পানি উতলে পড়ে যাবে যা ঐ মগের চারপাশ বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। এজন্য ঠিক যতটুকু বলার প্রয়োজন, যতটুকু পরামর্শ দেয়ার প্রয়োজন, যতটুকু সমাজের জন্য কিংবা জাতি রাষ্ট্রের জন্য করা প্রয়োজন। তারচেয়ে বেশী হলেই তা অতিরিক্ত বলে গণ্য হবে। তাই এই শিরোনামের মূল বিষয়বস্তু হল - মুখের কথা বার্তার লাগামহীনতা ও অপ্রয়োজনীয় কথার অব্যবহার্যতা, রঙ্গে ঢংয়ে উপহাস সূচক আলোকপাত করা, যা পরিবার বা সমাজ সংসারের অসুবিধার কারণ হয়, যেটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চারিদিকে নেতিবাচকভাবে বিস্তৃত হয়। এছাড়া আমরা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ছোটগল্প, উপন্যাসে দেখেছি অতিমাত্রায় বাক্যবাণ, বাচাল গোছের স্বভাব ও মিথ্যা বুলি আওড়ানোর ফলে রাখাল বালক বাঘের খপ্পরে পড়েছিল, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের পতন হয়েছিল, আর ক্রমাগত অবিশ্বাসের জন্ম দিয়ে অসংখ্য মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, যা কিন্তু মোটেও কাম্য নয়। সুতরাং, আসুন আমরা সবাই পরিমিত বাক্যবিনিময়, স্বল্পভাষী আচরণ ও চিন্তার জগতকে প্রসারিত করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আলোকিত করি।

1 Comments for "মুখ দোষ"

  1. CasinoTipo Casino » Get 200% Welcome Bonus with 400
    CasinoTipo kadangpintar Casino offers 200% 라이브스코어 Welcome Bonus up to 400 EUR on your first deposits 바카라 사이트 and 토토커뮤니티 up 라이브스코어 to 400 EUR for new players. Register and use your bonus.

    ReplyDelete
Previous Post Next Post

Contact Form