সমাজে পুরুষ মানুষ

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন জাতের, বিভিন্ন প্রকৃতির পুরুষ মানুষ আছে। তাদের মধ্য তিন ধরনের পুরুষ মানুষ বেশী পাওয়া যায়।

একদল পুরুষ মানুষ আছেন যারা অভাব অনটনে কোন রকমে সংসার চালান। কিন্তু তাদের স্ত্রীরা যখন কোন কিছু আবদার করে, সেটা তারা যতটুকু সম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করেন। কারণ তারা তাদের প্রিয়তমার হাসির মাঝেই সুখ খুজে পায়। হয়তো তাদের প্রাচুর্য্য নেই কিন্তু তাদের আছে বিশাল একটি মন-মানষিকতা।

সমাজে পুরুষ মানুষ | বাংলার পুরুষ

আরেক দল পুরুষ আছেন, যাদের টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ অনেক কিছুই আছে কিন্তু তারা সংকীর্ণ মনের অধিকারী। তাদের ধন আছে কিন্তু মন নেই। তারা ভাবেন, বউ তো আর বিশেষ কোন মানুষ বা প্রেমিকা নয়, যে তার পিছনে শুধু শুধু টাকা খরচ করে অপচয় করতে হবে। তারা তাদের স্ত্রীর পিছনে খরচ করাকে অপচয় ভাবেন। তারা শুধু তাদের বউকে সাথে রেখেছেন সমাজের চাপে পড়ে, বলতে গেলে একরকম বাধ্য হয়েই। কিন্তু স্ত্রীদের প্রতি তাদের মনে ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই। তারা যে স্ত্রীদের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে জীবন পার করছেন সেটা আর কেউ না বুঝতে পারলেও তাদের স্ত্রীরা ঠিক'ই বুঝেন। তারা সবকিছু শুধু মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছেন সংসার বাঁচানোর জন্য। সামাজিকতা রক্ষায় শুধু এক ছাদের নিচে বাধ্য হয়ে অবস্থান করা যা বুঝায় সেটাই। তাদের সম্পর্ক এর চেয়ে বেশী কিছু নয়।

আরেক দল পুরুষ মানুষ আছেন, যাদের বউ ১টি জিনিসের কথা বললে তারা- ৭টা জিনিস নিয়ে হাজির হন। যদি তারা ১ টাকা দামের কোন কিছু চান তবে তারা ৭ টাকা দামের জিনিস ক্রয় করেন। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যর পালনের মাধ্যমে অনেক পুরুষের হৃদয় শীতল হয়। তারা ধনীও হতে পারেন আবার গরীবও হতে পারেন। অল্পতে অনেক পুরুষের মন ভরে না। তারা স্ত্রীর আনন্দের মাঝেই নিজের আনন্দ খুজে পান। আসলে এখানে প্রধান বিষয় হল মনের, টাকার নয়। এসবকে অপচয় মনে করে আবার তাদের স্ত্রীরা অনেক সময় চিল্লা চিল্লি করে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা স্বামীদের প্রতি অসন্তুষ্ট নন, বরং খুশিই হয়ে থাকেন। স্বামীর কাছে স্ত্রীর গুরুত্ব কতটুকু সেটা প্রকাশ পায় একজন পুরুষের আচার-ব্যবহারে। আসলে প্রকৃত সুখী তো তারাই, যারা একে অপরের সুখের মাঝে নিজের সুখ খুজে পায়।

শুধু যে কোন মূল্যবান জিনিস ক্রয় করে বা টাকা-পয়সা খরচ করে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হবে সেটা নয়। তবে এ ছোট ছোট বিষয়গুলো যে জীবনের অংশ সেটা মনে রাখতে হবে। এসব ছোট ছোট বিষয় থেকেই কারো মন ভাঙ্গে আবার কারো হয় সূর্য্যদয়। আপনার স্ত্রীকে জীবনে আপনি কি দিলেন আর না দিলেন, সেটার চেয়েও একজন নারীর কাছে বড় বিষয় হল আপনি তার সুখের জন্য কতটুকু চেষ্টা করেছেন। জীবনে চলার পথে তাকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছেন। বেশীর ভাগ নারীরাই সম্মান চায়, গুরুত্ব চায়, ভালোবাসা চায়, চায় একটু ভালো ব্যবহার। আপনাদের ভেতরে যদি সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ না থাকে তবে আপনি কেমন মানুষ? সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষের প্রতি সদাচরণ, চরিত্র গঠন, নীতি-নৈতিকতা এবং একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। জীবনে শৃংঙ্খলা আনে এবং মানুষকে পরিপূর্ণ হতে সাহায্য করে। এসব জিনিস শুধু জানার বিষয় নয়, চর্চার বিষয়। কাজে পরিণত করার বিষয়।

চাহিদা যেহেতু জীবনের অংশ, সেটা তো সামনে আসবেই। যতটুকু সম্ভব আপনি তা পূর্ণ করার চেষ্টা করবেন সেটাই তো স্বাভাবিক বিষয় ছিল। কিন্তু এই বিষয়টাকেই অনেক পুরুষরা অস্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছেন। যদি না পারেন, কম করে হলেও তাদের আবদার পূরণ করার চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে নিজে থেকে তাদের জন্য কেনাকাটা করুন। দামী উপহারে চেয়ে আপনার আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা তাদের কাছে বেশী মূল্যবান। অন্তত কিছু দিতে না পারেন, তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলুন। আপনার একটি সুন্দর হাসি তাদের কাছে হয়তো কোটি টাকার চাইতেও বেশী দামী। কিন্তু যে পুরুষ তার স্ত্রীর চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেয় না, স্ত্রীদের চাওয়া-পাওয়ার কোন মূল্যই তাদের কাছে নেই, সে সমস্ত পুরুষরা বেঁচে আছেন ঠিক'ই কিন্তু তাদের মনে না আছে কোন আনন্দ আর না আছে কোন অনুভূতি। তাদের ভেতরে মায়া-মমতা, ভালোবাসা কোন কিছুই নেই। অথচ ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, শিষ্টাচার, সদাচরণ, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ও সহানুবর্তিতা হলো আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ। এসব সামাজিকতা সম্পর্কে যারা বুঝতে চায় না তারা সামাজিক জীবের অন্তর্গত নয়। তারা সমাজের বাহিরের মানুষ। তাদের না আছে বিবেক, আর না আছে মনুষত্ব্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form