গ্রামের এক মোড়ে সমেবেত হতে লাগল মানুষ। কিছুক্ষণ পরেই বিশাল জনস্রোতে পরিণত হলো। শুরু হলো মিছিল, সেই মিছিলে শরীক হলো নুরা পাগলা। সে নাচতে নাচতে বললো- “ভোট! ভোট! ভোট! জনগণের ভোট”। মিছিলের পরে শুরু হলো চা-বিস্কুট, পান, বিড়ি, সিগারেট পর্ব। রাস্তার পাশে চায়ের দোকান বসেছে। দোকানে টাঙ্গিয়ে রাখা পোস্টারের প্রার্থীর নামে একটু গুনকীর্তন করলেই চা মিলছে বিনামূল্যে। দোকানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আসছে, খাচ্ছে আর ভোটের অঙ্গীকার করে বিদায় নিচ্ছে। নুরা পাগলা বেশ কয়েকবার দোকানের আশেপাশে বসার চেষ্টা করে যুৎ করতে পারেনি। কাছে গেলেই লোকজন খেকিয়ে উঠে। একজন অতি উৎসাহী হয়ে লাঠি বসিয়ে দিয়েছে তাঁর গায়ে। এখনও ব্যাথায় টনটন করতেছে জায়গাটা। তার পরেও বিনামূল্যের চায়ের আশা ছাড়তে পারেনি নুরা পাগলা। এদিক সেদিক ঘোরে এক দেয়াল থেকে একটি পোস্টার নিয়ে ধীর গতিতে আবার দোকানের কাছে গিয়ে বললো- এরেই ভোট দিমু! এখন চা দেও দেখি! অমনি সবাই হৈ চৈ করে উঠলো, “হুর! হুর! এখানে থেকে ভাগ ব্যাটা। পাগলের আবার ভোট হয় নাকি?”
স্কুলের মাঠে বেশ ভিড় জমেছে। শত শত মানুষ আসছে ভোট দিতে। এমন সময় একজন সর্বজ্ঞ মহানুভব লোক এসে ঘোষণা করলেন- “ভাই সকল! আপনারা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। আপনাদের আর কষ্ট করতে হবে না। আপনারা কোন প্রার্থীকে ভোট দিবেন তা তো আমরা জানি। সুতরাং আপনারা সবাই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। আমরা কথা দিচ্ছি আপনাদের ভোট আমরা অবশ্যই দিয়ে দেব।” ঘোষণার পর অর্ধেকের বেশি লোক চলে গেল। যে কয়েকজন “অধিকার! অধিকার” বলে একটু শোরগোল করছিল তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করে দেয়া হলো। ভোট চলতে থাকলো নিরাপদে, সুষ্ঠ এবং শান্তিপূর্ণভাবে। ভোট দিতে দিতে হাপিয়ে উঠতে লাগলো একেকজন। দেড়-দুই হাজার মানুষের ভোট চার পাঁচজন মিলে দেয়া, সেকি সহজ কথা? এদিকে বেলা বাড়ছে। বসে বসে গভীর মনযোগে নিজের লাঠিখানা যাচাই করতে করতে বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছেন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যটি। এইফাকে ভোট কেন্দ্রে এসে হাজির হলো নুরা পাগলা। ভেতরে ঢুকতেই একটি শোরগোলে পড়ে গেল। “আরে পাগলটা ঢুকলো ক্যামনে?” “থাক! থাক! শোর কইরোনা, জিগাও কি চায়?” “নুরা পাগলা কি চাও? ভোট দিবা?”
ভোটের পর সন্ধ্যায় বিজয় মিছিল বের হলো। এবার আর নুরা পাগলা সেই মিছিলে যায়নি। রাস্তার পাশে বিনামূল্যের চায়ের দোকান এখন খালি পড়ে আছে। দোকানে টাঙ্গিয়ে রাখা পোস্টারের সামনে গিয়ে দাড়ালো সে। পোস্টারে প্রার্থীর হাসোজ্জল মুখ। কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো। নুরা পাগলা একদলা থুথু ছিটিয়ে দিল পোস্টারে। তারপর বিড়বিড় করে বললো- “শুয়োরের বাচ্চাটারে দশখানা ভোট দিলাম, আর শালারা পাগলের কোন ভোট নাই, এক কাপ চা দিলোনা আমারে”।
Tags
জীবন