প্রতিবার নির্বাচনের পর, অর্ধেক বছর যেতে না যেতেই এলাকার চা দোকানে বসলে শুনতে পারবেন- অমুক রে ভোট দিয়া কি যে ভুল করেছি? আগে জানলে কি আর এই ভূল করতাম?
নির্বাচনের পর কেহ হেসেছেন বিজয়ের অট্টহাসি, আবার অনেকেই পরাজিত হয়ে গায়ে জড়িয়েছেন রং বেরঙের অগণিত তালি লাগানো ফাড়া কাঁথা। অনেকের আমও গেছে ছালাও গেছে। আবার অনেকে আনন্দে লাফাতে লাফাতে চিৎকার চেচামেচি করে সাধের গলাটাও ভেঙ্গে দিয়েছেন। আনন্দে আহলাদে গলায় পরেছেন গোলাপ ফুলের মালা। দর্শনার্থীদের দেয়া উপহার হিসেবে হাতে নিয়েছেন বাহারি ফুলের আস্ত তোড়া। তাদের সাথে গ্রুপ ছবি তুলেছেন দাত বের করে। বিজয় মিছিল বা বিজয় আনন্দের তুফানে দোলা দিয়েছে অনেকেরই মন। বাসায় বা বাড়িতে গিয়ে গিন্নিকে দেখিয়েছেন ভিডিও ফুটেজের কিংবা ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি। পত্র-পত্রিকায় আসা ছবিগুলোকে অতি সযতনে ফাইল করে সংরক্ষন করে রাখতে কার্পন্য করেননি। ভবিষ্যতে যারা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন তাদের সিংহভাগ প্রার্থীও এমন রুটিন ওয়ার্ক চালিয়ে যাবার জন্য আটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের দেশে পার্লামেন্ট উপজেলা ইউনিয়নসহ যে কোন নির্বাচন এলেই ভোটারদের এক্কেবারে খাটি সরিষার তেল মারা শুরু হয়, অত্যান্ত চাতুরতার সাথে পরিকল্পিতভাবে। বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিরা অত্যান্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে জনগনের সেবাকে ইবাদত আখ্যা দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে স্ব-উদ্যোগে জনসেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নির্বাচনের পুর্বেই। আদর আপ্যায়ন চা-বিস্কুট, পান-সুপারী থেকে শুরু করে আরও বাহারি পদের মহামুল্যবান খেদমত চালানো হয় পরম আগ্রহ ও যত্ন সহকারে। অনেক ভোটার আপসোস করে বলেন- এসব মায়াবী খেদমত যদি নির্বাচনের পরেও চলতো তবে কতইনা আরাম হতো।
তবে ভাবনার বিষয় হচ্ছে- আমাদের দেশে বর্তমানে নির্বাচন যেন বড়লোকের খেলা। যাদের অঢেল টাকা পয়সা আছে, লাটিয়াল বাহিনী আছে, তারাই কেবল নির্বাচন করতে এবং বিজয়ী হতে সক্ষম। টাকাও নাকি ছাড়তে হয় সময় সুযোগ ও এক্কেবারে জায়গামতো। বিগত কয়েকটি নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে সৎ যোগ্য ও ব্যক্তি হলেও অঢেল টাকা পয়সা ঢালতে ব্যর্থ হওয়ায় বিজয়ের হাসি হাসতে না পেরে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছেন। গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখলাম নির্বাচনের দু-তিন রাত পুর্ব থেকেই অধিকাংশ গ্রামের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকেরা বা ভাড়াটে লোকেরা রাত জেগে সশস্ত্র পাহারা দেয়। কারন জানতে চাইলে উত্তর মিলে অমুক প্রার্থীর লোকেরা টাকার বস্তা নিয়ে বের হবে বিতরনের জন্য। ভোট প্রতি একশত টাকা থেকে শুরু করে হাজার কিংবা তার চেয়েও বেশি দেয়া হয়। তাই লোকেরা যাতে গ্রামে বা মহল্লায় টাকা নিয়ে ঢুকে শান্তিপুর্ণভাবে ভোট খরিদ করতে না পারে সেজন্য এই বন্দোবস্ত। নির্বাচনের পরে দেখা যায় পেশি শক্তি ও টাকার বস্তার মোকাবেলায় সত্যিই জনসমর্থন যোগ্যতা ও সততার পরাজয় ঘটে শোচনীয়ভাবে। আশ্চর্যের বিষয় এসব লোমহর্ষক ঘটনা সাধারন মানুষের যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। মানুষ এসব জানলেও অবাক হয়না।
নির্বাচন কমিশনারের কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের আসল হিসেব দেয়া হয় না। শুধুমাত্র প্রার্থীর ক্বলবের ভিতরেই থাকে আসল বা মুল হিসেব। জানতে পারেন শুধু দুই কাধের মুনকির ও নকীর ফেরেশতা। অনেকে আবার কয়েক বছর পুর্ব থেকেই দীর্ঘমেয়াদী ও টার্গেট ভিত্তিক জায়গা চিনে এক্কেবারে খাটি সরিষার তেল প্রদান করে, নিজের পাল্লা ভারি করার কাজ সেরে রাখেন। আবার অনেকেই নির্বাচনকে টার্গেট করে ভোটারদের পারিবারিক সামাজিক বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠান, যেমন- আকদ বিয়ে, জন্মদিন, খতনা, ওয়াজ মাহফিল খেলাধুলা, সালিশী বিচার এমনকি জানাজাতে ঘন ঘন শরিক হন নির্বাচনকে টার্গেট করে। অনেকে পকেটের টাকা বরাদ্ধ দিয়ে কর্মী সমর্থকদের মাধ্যমে বিভিন্নস্থানে খেলাধুলা, গান-বাজনা, মেলা ষাড়ের লড়াই দৌড় কিংবা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে নিজে উদ্বোধক সভাপতি বা প্রধান অতিথিও সাজতে দেখা যায়, নির্বাচনকে টার্গেট করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ভোটারদের আপদে বিপদেও লোকদেখানো সাহায্য করতে দেখা যায় ভোট ও জনসমর্থনের পাল্লা ভারী করার উদ্দেশ্যে।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে নির্বাচনের পরে জনসেবার বা খেদমতের চিত্র সম্পুর্ণরূপে পাল্টে যায়। স্বরূপ উদঘাটন হয় মানুষের ভেতর আরেক মানুষের। পুরনো চেহারা মুবারক ধীরে ধীরে বেরুতে থাকে জনসম্মুখে। সেবার ধরনও সম্পুর্ণরূপে পাল্টে যায়। স্রোত তখন উজান বইতে শুরু করে। নির্বাচনের পুর্বে কাড়ি কাড়ি অর্থ চাল, ডাল, চা, দুধ, চিনি, সিগারেট বিড়ি খরচ ও রাত জেগে খেয়ে না খেয়ে যে মহান সেবা প্রদান করা হয় তা কড়ায় গন্ডায় আদায় শুরু হয়ে যায়। ভোটাররা পাল্টা সেবা করতে হয় আদব ও সতর্কতার সাথে। তৈল মালিশ করতে হয় সময় সুযোগমতো। জনসেবকদের কাছের লোকদের কদরও তখন হয়ে যায় আকাশচুম্বী। অনেক সময় কাছের লোকেরা দালাল হিসেবেও কাজ করতে দেখা যায়। দালালরাও সময় সুযোগমতো পকেট ভারি করে। তাই অনেককে বলতে শুনি যা খেদমত উদ্ধার করার তা ইলেকশনের আগেই উদ্ধার করে নাও, ইলেকশনের পরেতো উল্টো খেদমতের পালা। তখন তাদের দর্শন লাভ করতে কয়েকদিন পুর্ব থেকেই সিরিয়াল নেবার প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া ওই জনপ্রতিনিধির খাতিরের লোকদের কাছে বার বার ধর্না দিয়ে সাহেবের দিদার নসীবের পরিবেশও সৃষ্টি করার প্রয়োজন হতে পারে। সত্যিই দেখা যায়, যারা পরবর্তী পাঁচটি বছর নিজের আয়েশ আরাম ও মহামুল্যবান সময়কে কুরবানী দিয়ে জনগনের সেবা করার মহান ব্রত নিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান, তাদের সিংহভাগই জনগনের সেবা বা খেদমত নির্বাচনের আগেই করেন হৃদয় মন প্রাণ উজাড় করে। এমন উজাড় করেন যে, নির্বাচনের পর ঝুলিতে অবশিষ্ট খেদমত করার মানসিকতা নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। তখন উল্টো জনসাধারনের সেবার পালা শুরু হয়। সুদে আসলে নির্বাচনের পুর্বের সেবা উসুল করেন মান্যবর জনপ্রতিনিধি বা স্বঘোষিত মহাসেবকরা। সালাম দিলে অনেক সময় সালামের উত্তর শুধুমাত্র ভাগ্যবানরা পায়। দেখা যায় নির্বাচনের পুর্বে যে নেতা আগেই কুশল বিনিময়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেন, বয়স্কদেরকে সম্মান করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার বায়না ধরতেন সেই জনপ্রতিনিধিই নির্বাচনের পরে পার্শ্ব দিয়ে যাবার সময় কুশল বিনিময় দুরের কথা, তাকে উল্টো খুবই আদব ও সতর্কতার সাথে সম্ভাষন না জানালে গোস্বা করেন। অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচনের আগে ভোটারদের চিনলেও নির্বাচনের পর আমতা আমতা করে, না চেনার ভান করেন। তখন বায়োডাটা বা রেফারেন্স দিতে হয় কিংবা চৌদ্দ পুরুষের নাম বলতে হয়। এই হলো আমাদের দেশের সিংহভাগ জনদরদী জনসেবার বাস্তব নমুনা।
তবে এতো ভেজালের ভিড়ে এখনও কিছু সৎ যোগ্য, খাটি দেশপ্রেমিক জনপ্রতিনিধি আছেন, যারা নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিঃস্বার্থভাবে জনগনের সেবা করেন। জনগনের হৃদয়ের গভীরে স্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষের মনে ও ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন। তবে তাদের সংখ্যা বের করতে হলে দুরবীনের প্রয়োজন পড়বে।
নির্বাচনের পর কেহ হেসেছেন বিজয়ের অট্টহাসি, আবার অনেকেই পরাজিত হয়ে গায়ে জড়িয়েছেন রং বেরঙের অগণিত তালি লাগানো ফাড়া কাঁথা। অনেকের আমও গেছে ছালাও গেছে। আবার অনেকে আনন্দে লাফাতে লাফাতে চিৎকার চেচামেচি করে সাধের গলাটাও ভেঙ্গে দিয়েছেন। আনন্দে আহলাদে গলায় পরেছেন গোলাপ ফুলের মালা। দর্শনার্থীদের দেয়া উপহার হিসেবে হাতে নিয়েছেন বাহারি ফুলের আস্ত তোড়া। তাদের সাথে গ্রুপ ছবি তুলেছেন দাত বের করে। বিজয় মিছিল বা বিজয় আনন্দের তুফানে দোলা দিয়েছে অনেকেরই মন। বাসায় বা বাড়িতে গিয়ে গিন্নিকে দেখিয়েছেন ভিডিও ফুটেজের কিংবা ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি। পত্র-পত্রিকায় আসা ছবিগুলোকে অতি সযতনে ফাইল করে সংরক্ষন করে রাখতে কার্পন্য করেননি। ভবিষ্যতে যারা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন তাদের সিংহভাগ প্রার্থীও এমন রুটিন ওয়ার্ক চালিয়ে যাবার জন্য আটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের দেশে পার্লামেন্ট উপজেলা ইউনিয়নসহ যে কোন নির্বাচন এলেই ভোটারদের এক্কেবারে খাটি সরিষার তেল মারা শুরু হয়, অত্যান্ত চাতুরতার সাথে পরিকল্পিতভাবে। বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিরা অত্যান্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে জনগনের সেবাকে ইবাদত আখ্যা দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে স্ব-উদ্যোগে জনসেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নির্বাচনের পুর্বেই। আদর আপ্যায়ন চা-বিস্কুট, পান-সুপারী থেকে শুরু করে আরও বাহারি পদের মহামুল্যবান খেদমত চালানো হয় পরম আগ্রহ ও যত্ন সহকারে। অনেক ভোটার আপসোস করে বলেন- এসব মায়াবী খেদমত যদি নির্বাচনের পরেও চলতো তবে কতইনা আরাম হতো।
তবে ভাবনার বিষয় হচ্ছে- আমাদের দেশে বর্তমানে নির্বাচন যেন বড়লোকের খেলা। যাদের অঢেল টাকা পয়সা আছে, লাটিয়াল বাহিনী আছে, তারাই কেবল নির্বাচন করতে এবং বিজয়ী হতে সক্ষম। টাকাও নাকি ছাড়তে হয় সময় সুযোগ ও এক্কেবারে জায়গামতো। বিগত কয়েকটি নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে সৎ যোগ্য ও ব্যক্তি হলেও অঢেল টাকা পয়সা ঢালতে ব্যর্থ হওয়ায় বিজয়ের হাসি হাসতে না পেরে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছেন। গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখলাম নির্বাচনের দু-তিন রাত পুর্ব থেকেই অধিকাংশ গ্রামের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকেরা বা ভাড়াটে লোকেরা রাত জেগে সশস্ত্র পাহারা দেয়। কারন জানতে চাইলে উত্তর মিলে অমুক প্রার্থীর লোকেরা টাকার বস্তা নিয়ে বের হবে বিতরনের জন্য। ভোট প্রতি একশত টাকা থেকে শুরু করে হাজার কিংবা তার চেয়েও বেশি দেয়া হয়। তাই লোকেরা যাতে গ্রামে বা মহল্লায় টাকা নিয়ে ঢুকে শান্তিপুর্ণভাবে ভোট খরিদ করতে না পারে সেজন্য এই বন্দোবস্ত। নির্বাচনের পরে দেখা যায় পেশি শক্তি ও টাকার বস্তার মোকাবেলায় সত্যিই জনসমর্থন যোগ্যতা ও সততার পরাজয় ঘটে শোচনীয়ভাবে। আশ্চর্যের বিষয় এসব লোমহর্ষক ঘটনা সাধারন মানুষের যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। মানুষ এসব জানলেও অবাক হয়না।
নির্বাচন কমিশনারের কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের আসল হিসেব দেয়া হয় না। শুধুমাত্র প্রার্থীর ক্বলবের ভিতরেই থাকে আসল বা মুল হিসেব। জানতে পারেন শুধু দুই কাধের মুনকির ও নকীর ফেরেশতা। অনেকে আবার কয়েক বছর পুর্ব থেকেই দীর্ঘমেয়াদী ও টার্গেট ভিত্তিক জায়গা চিনে এক্কেবারে খাটি সরিষার তেল প্রদান করে, নিজের পাল্লা ভারি করার কাজ সেরে রাখেন। আবার অনেকেই নির্বাচনকে টার্গেট করে ভোটারদের পারিবারিক সামাজিক বিভিন্ন ধরনের আচার অনুষ্ঠান, যেমন- আকদ বিয়ে, জন্মদিন, খতনা, ওয়াজ মাহফিল খেলাধুলা, সালিশী বিচার এমনকি জানাজাতে ঘন ঘন শরিক হন নির্বাচনকে টার্গেট করে। অনেকে পকেটের টাকা বরাদ্ধ দিয়ে কর্মী সমর্থকদের মাধ্যমে বিভিন্নস্থানে খেলাধুলা, গান-বাজনা, মেলা ষাড়ের লড়াই দৌড় কিংবা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে নিজে উদ্বোধক সভাপতি বা প্রধান অতিথিও সাজতে দেখা যায়, নির্বাচনকে টার্গেট করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ভোটারদের আপদে বিপদেও লোকদেখানো সাহায্য করতে দেখা যায় ভোট ও জনসমর্থনের পাল্লা ভারী করার উদ্দেশ্যে।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে নির্বাচনের পরে জনসেবার বা খেদমতের চিত্র সম্পুর্ণরূপে পাল্টে যায়। স্বরূপ উদঘাটন হয় মানুষের ভেতর আরেক মানুষের। পুরনো চেহারা মুবারক ধীরে ধীরে বেরুতে থাকে জনসম্মুখে। সেবার ধরনও সম্পুর্ণরূপে পাল্টে যায়। স্রোত তখন উজান বইতে শুরু করে। নির্বাচনের পুর্বে কাড়ি কাড়ি অর্থ চাল, ডাল, চা, দুধ, চিনি, সিগারেট বিড়ি খরচ ও রাত জেগে খেয়ে না খেয়ে যে মহান সেবা প্রদান করা হয় তা কড়ায় গন্ডায় আদায় শুরু হয়ে যায়। ভোটাররা পাল্টা সেবা করতে হয় আদব ও সতর্কতার সাথে। তৈল মালিশ করতে হয় সময় সুযোগমতো। জনসেবকদের কাছের লোকদের কদরও তখন হয়ে যায় আকাশচুম্বী। অনেক সময় কাছের লোকেরা দালাল হিসেবেও কাজ করতে দেখা যায়। দালালরাও সময় সুযোগমতো পকেট ভারি করে। তাই অনেককে বলতে শুনি যা খেদমত উদ্ধার করার তা ইলেকশনের আগেই উদ্ধার করে নাও, ইলেকশনের পরেতো উল্টো খেদমতের পালা। তখন তাদের দর্শন লাভ করতে কয়েকদিন পুর্ব থেকেই সিরিয়াল নেবার প্রয়োজন হতে পারে। তাছাড়া ওই জনপ্রতিনিধির খাতিরের লোকদের কাছে বার বার ধর্না দিয়ে সাহেবের দিদার নসীবের পরিবেশও সৃষ্টি করার প্রয়োজন হতে পারে। সত্যিই দেখা যায়, যারা পরবর্তী পাঁচটি বছর নিজের আয়েশ আরাম ও মহামুল্যবান সময়কে কুরবানী দিয়ে জনগনের সেবা করার মহান ব্রত নিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান, তাদের সিংহভাগই জনগনের সেবা বা খেদমত নির্বাচনের আগেই করেন হৃদয় মন প্রাণ উজাড় করে। এমন উজাড় করেন যে, নির্বাচনের পর ঝুলিতে অবশিষ্ট খেদমত করার মানসিকতা নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। তখন উল্টো জনসাধারনের সেবার পালা শুরু হয়। সুদে আসলে নির্বাচনের পুর্বের সেবা উসুল করেন মান্যবর জনপ্রতিনিধি বা স্বঘোষিত মহাসেবকরা। সালাম দিলে অনেক সময় সালামের উত্তর শুধুমাত্র ভাগ্যবানরা পায়। দেখা যায় নির্বাচনের পুর্বে যে নেতা আগেই কুশল বিনিময়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেন, বয়স্কদেরকে সম্মান করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার বায়না ধরতেন সেই জনপ্রতিনিধিই নির্বাচনের পরে পার্শ্ব দিয়ে যাবার সময় কুশল বিনিময় দুরের কথা, তাকে উল্টো খুবই আদব ও সতর্কতার সাথে সম্ভাষন না জানালে গোস্বা করেন। অনেক সময় দেখা যায় নির্বাচনের আগে ভোটারদের চিনলেও নির্বাচনের পর আমতা আমতা করে, না চেনার ভান করেন। তখন বায়োডাটা বা রেফারেন্স দিতে হয় কিংবা চৌদ্দ পুরুষের নাম বলতে হয়। এই হলো আমাদের দেশের সিংহভাগ জনদরদী জনসেবার বাস্তব নমুনা।
তবে এতো ভেজালের ভিড়ে এখনও কিছু সৎ যোগ্য, খাটি দেশপ্রেমিক জনপ্রতিনিধি আছেন, যারা নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিঃস্বার্থভাবে জনগনের সেবা করেন। জনগনের হৃদয়ের গভীরে স্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। মানুষের মনে ও ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন। তবে তাদের সংখ্যা বের করতে হলে দুরবীনের প্রয়োজন পড়বে।
Tags
জীবন