আমরা পিছনে দৌড়াচ্ছি?

আমরা সমাজের সাধারণ মানুষেরা যাদের বিশ্বাস করে নেতা বানিয়ে থাকি বা সমর্থন করছি- সে যদি নিজেই সাধারণ মানুষদের নির্যাতন করে, তার ডাকে কি কেহ আসবে? সে তো পূর্বেও পেশি শক্তির জোরে অতি নিরীহ, সংখ্যালঘু মানুষদের নির্যাতন করে ছিল এবং এখনও করছে। নিপীড়িত মানুষ গুলো ভুলে যায়নি, এখনও দূঃখের সাগরে ভাসছে! শাহজাদাপুরের মানুষ, আমরা কার পিছনে দৌড়াচ্ছি?

১৯৯১ সালে দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছিল দেওড়া, মলাইশ, গাজীপুর, শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাওরিয়া গ্রামের অনেক ছাত্র-ছাত্রী। দূর-দূরান্ত হতে পায়ে হেঁটে আসত অনেকেই। তাদের মধ্যে অনেকেরই নাম মনে নেই। তবে শাহজাদাপুর গ্রামের মোঃ মামুন খান (বর্তমানে সাংবাদিক মামুন) সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খাদেমের ছেলে টিপু ও তার এক মেয়ে আরও অনেকে। দূর-দূরান্ত হতে আসা ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সক্ষতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওটে ছিল শাহজাদাপুর গ্রামের মোঃ মামুন এর সাথে। ক্লাস শেষে প্রায়ই থাকে মলাইশ গ্রামের ব্রিজ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম। অনেক সময় তাকে নিজের কাছে রেখে দিতাম। নিয়ামতপুরের এক ছাত্রের সাথে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মাঝে  মধ্যে তাকে গাজীপুর গ্রামের মুড়াহাটির পূর্ব পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম। সে একদিন আমাকে একটি অনুরোধ করে এবং সে আমার সহযোগিতা চেয়ে তার বাস্তব জীবনে চিত্র তুলে ধরে বলে ছিল তার জীবন কাহিনি।

১৯৮৮ সালে বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বন্যা সৃষ্টিতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়ে ছিল। সেই প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ে প্রাণ থেকে সম্পদহানি হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। দিশেহারা হয়ে ছিল আমাদের শাহজাদাপুর ইউনিয়নের অনেক মানুষ। সে সময় কোন উপায় না পেয়ে, তার বাবা তাদের সর্বশেষ সম্বল ২ কানি জমি বন্দক রেখে ৫০০০ টাকা গ্রহণ করে শাহজাদাপুরের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে। দৈর্ঘ্য তিন বছর পর- ১৯৯১ সালে সেই ৫০০০ টাকা ফেরত দিয়ে জমি নিজ দখলে আনতে গেলে, তাদের কাছে ১৫০০০ টাকা দাবি করে বসে। অন্যথায় জমি সাব-কাওয়ালা করে দিতে চাপ প্রয়োগ করে। তাহারা সংখ্যালঘু তাদের পেশি শক্তির জোর নেই, তাহারা অতি নিরীহ। আমার কাছে তার জীবন কাহিনি বলার একটি  মাতৃর কারণ ছিল। যাদের সাথে জমি নিয়ে বিরুদ, তারই ছেলে আমার সাথে লেখাপড়া করে এবং সে ছিল দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। মাঝে মধ্যে ক্লাস করতঃ তার সাথে আমার কোথাও হত। সে জন্যই সে আমার কাছে বিষয়টি সমাধানের জন্য সহযোগিতা চেয়েছিল। যেহেতু আমি ছিলাম ছোট ও ছাত্র জীবন। আমার দ্বারা যতটুকু সম্ভব, আমি সর্বাত্বক চেষ্টা করিয়া সমাধানে ব্যর্থ হয়েছিলাম। তবে ঘটনাটি এখনও ভুলে যায়নি।

২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুর ১০:৩০ মিনিটে দেওড়া বাজারে নিয়ামতপুরের সেই বন্ধুটি নদীর মাছ নিয়ে এসেছে বিক্রয় করার জন্য। অনেকেই মাছের দাম জিজ্ঞেস করছে। সে দাম চায়তেছে ১৬০০ টাকা। আমি একটু সামনে এগিয়ে মাছের দাম জিজ্ঞেস করতেই সে আমার দিকে হা- করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অবশেষে, মাছ আমাকে দিয়ে দিল। মাছের দাম নিতে চায়নি। অনেক জোরাজোরি করার পর তার কেনা দাম ১০০০ টাকা দিতে পেরেছি। তখন সেই ১৯৯১ সালের নির্মম ভাবে নিপিড়ীত ঘটনাটির জন্য আমি দূঃখ প্রকাশ করতেই, তার চোখের পানি টলমল করতে লাগল। তখন মনে হচ্ছিল, সে এক দূঃখের সাগরে ভাসছে!

নিয়ামতপুর ও ধাওরিয়া গ্রামের সংখ্যালঘু অতি নিরীহ মানুষ গুলো নির্যাতিত হয়ে বহু পূর্বকাল থেকে এভাবেই দেওড়া গ্রামে আসে এবং যত সম্ভব সুবিচার পেয়ে থাকে। দেওড়া গ্রামের সাধারণ মানুষ ও নেতৃত্বদান কারীরা সব সময়ই পাশ্ববর্তী গ্রামের মানুষদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সুবিচার কামনা করে থাকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form