মানুষের মূল্য কত?

দশ বছরের এক এতিম কিশোর পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা পেতে পেতে একদিন তার দাদুর কাছে প্রশ্ন করল "আচ্ছা দাদু বলতে পারো আমার দাম কত?"

দাদু বিস্ময়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঘরের মধ্য থেকে কাপড়ে মোড়ানো একটি জিনিসের টুকরা ছেলেটির হাতে দিয়ে বললেন- "এটা বিক্রির উদ্দেশ্য করে ১০ জন লোকের কাছে যাবে এবং এটার দাম জিজ্ঞেস করবে, কিন্তু মনে রাখবে ভুলেও এটা বিক্রি করবে না!"

যথারীতি ছেলেটা দাদুর দেয়া জিনিসটি নিয়ে প্রথমে এক লেবু বিক্রেতার কাছে গিয়ে এটার দাম জানতে চাইলো, লেবু বিক্রেতা বলল- "এটার দাম ৪ টা লেবু, আমি তোমাকে ৪ টা লেবু দিয়ে এটা কিনতে পারি!"

ছেলেটি এবার আলু বিক্রেতার কাছে গেলো, আলু বিক্রেতা বলল- "আমি তোমাকে ৫ কেজি আলু দিয়ে এটা কিনতে পারি!"

ছেলেটি এবার চাউলের দোকানদার এর কাছে গেলো সে বলল- "আমি তোমাকে ১ বস্তা চাউল দিয়ে এটা কিনতে পারি!"

এবার সে একটা স্বর্ণকারের কাছে গেল, স্বর্ণকার বলল- "আমি তোমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে এটা কিনতে পারি!"

এবার সে ওই এলাকার সবচেয়ে বড় হীরের ব্যবসায়ীর কাছে গেলো। হীরে ব্যবসায়ী জিনিসটা খুব সুন্দর করে বের করে তার টেবিলের উপর রেখে বিভিন্ন এংগেল থেকে ভাল করে দেখে বলল- "শোন বাবা আমি জীবন ভর ব্যবসা করে যা উপার্জন করেছি এমন কি আমার এই দোকান বিক্রি করেও তোমার এই জিনিসটি কেনার ক্ষমতা আমার নাই! আমি এর প্রকৃত মুল্য দিয়ে এটা নিতে পারব না কারণ এটা নেয়ার মত টাকা আমার এখনোও হয় নি! তার চেয়ে বরং তুমি এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক কোন দামী ব্যবসায়ীর কাছে যাও!"

ছেলেটি অবাক হয়ে জিনিসটি নিয়ে দাদুর হাতে ফেরত দিয়ে বলল- "দাদু লেবু ব্যবসায়ী ৪ টা লেবু, আর আলুর ব্যবসায়ী ৫ কেজি আলু, চাউলের ব্যবসায়ী ১ বস্তা চাউল, স্বর্নকার ২০ হাজার টাকা দিয়ে এটা নিতে চেয়েছে কিন্তু প্রকৃত এই জিনিসটি যিনি চেনেন তার কার কাছে তো এটা কেনার টাকা নাই!"

দাদু বললেন- "তোমার মূল্যটাও ঠিক। তেমনি, বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে যার যার রুচির আর সামর্থ অনুযায়ী তোমার মূল্যটা ঠিক এই রকম! দামী মানুষ তোমাকে দামী মূল্য দিবে আর লেবুর ব্যবসায়ীর মত ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী ও দৃষ্টিভঙ্গির লোকেরা তোমাকে ক্ষুদ্র মূল্যায়ন করবে!"

তাই তোমাকে কেউ মূল্যায়ন করল আর নাই করল তাতে তুমি মন খারাপ করোনা, তোমার নিজের মূল্য ঠিক তোমার কাছেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form