মানব সমাজ পশু সমাজ

পৃথিবীতে প্রাণীকুলে দুই ধরণের সমাজ বিদ্যমান, একটি মানব সমাজ অন্যটি পশু সমাজ। উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়ায় মানুষ তার চিন্তা ও বুদ্ধি দ্বারা অন্য প্রাণী থেকে আলাদা। ফলে মানুষ তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য আইন আদালত ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু জঙ্গলের অনেক মানব আকৃতির থেকে বৃহৎ পশুর বসবাস থাকলেও শুধু চিন্তাশক্তি উন্নত না থাকায় শৃঙ্খলিত একটি পশু সমাজ গঠন তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। ফলে পশু সমাজের বৈশিষ্ট্য হল সবচেয়ে হিংস্র ও শক্তিশালী পশু দ্বারা অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী পশুর নিয়ন্ত্রিত হওয়া এবং যাদের হিংস্রতা নেই বা অন্যের আক্রমণ থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করার শক্তি সাহস নেই তারা সারা জীবন হিংস্র পশুর ক্ষুধা নিবারণের আহার হবে এবং ভয় ও ভীতির মধ্য দিয়ে আমৃত্যু জঙ্গলে বসবাস করতে হবে।
মানব সমাজ এবং পশু সমাজ

আমরা মানুষেরা সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য রাষ্ট্র সৃষ্টি করলেও এখনো পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে পশু সমাজের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এইসব রাষ্ট্রে পশু সমাজের মতই সমাজের আর্থিক ও রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হিংস্র মানুষদের দ্বারা দুর্বল মানুষদের নিয়ন্ত্রিত হতে হয় এবং সমাজে তাদের বেঁচে থাকা না থাকা তাদের দয়ার উপর নির্ভরশীল। আইন আদালত থাকলেও মূলত ওগুলো প্রভাবশালীদের সুরক্ষা দেবার জন্যই তৈরি করে রাখা হয়েছে। বনের হিংস্র পশুর যেমন দুর্বল প্রাণীর রক্ত মাংসের স্বাদ নেবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় বিন্দু পরিমাণ চিন্তা করতে হয়না এই হিংস্রতার জবাবদিহিতার জন্য, বরং অন্য অন্য প্রাণীর রক্ত মাংস খাওয়া তার জন্মগত অধিকার। জঙ্গলের পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রগুলোতেও বসবাসরত মানুষরূপী হিংস্র পশুগুলোও নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে দিবালোকে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অন্য মানুষকে কুপিয়ে জখম করে রক্তের খেলায় মেতে উঠতে পারে। বনের পশুর যেমন সঙ্গমের ইচ্ছে জাগলে স্বজাতি যে কোনো পশুর অনুমোদন ছাড়াই সঙ্গমের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রে একজন মেয়ে ইচ্ছে করলেই তার নিজের মত করে বাঁচার অধিকারের কথা চিন্তা করতে পারেনা কারণ সমাজে ঘুরে বেড়ানো পশু মনোবৃত্তির লালায়িত মানব জানোয়ার নির্ভয়ে আক্রমণ করে যে কোনো সময় থামিয়ে দিতে পারে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা। এমন মানব জানোয়ারেরা জানে তার এই হিংস্রতার জন্য বনের পশুর মতই তার কোন জবাবদিহিতা থাকবেনা কারণ অর্থের বিনিময়ে এই সমাজ থেকে সমস্ত অপরাধের পরিণাম থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। বরং এমন রাষ্ট্রের মানব জানোয়ারেরা জঙ্গলের হিংস্র পশুর মতই ভাবে অন্যের রক্ত মাংস, সম্ভ্রম নিয়ে খেলা করা তার জন্মগত অধিকার। পশু সমাজে হিংস্র পশুদের দয়া না থাকেলেও, পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রগুলোতে দয়ার উপস্থিতি রয়েছে, এমন রাষ্ট্রের জনগণ জানে প্রচলিত আইন আদালত তাদের বিচারের জন্য নয়। তাই তারা আক্রান্ত হলে সরাসরি রাষ্ট্র প্রধানের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন, রাষ্ট্র প্রধান যদি কোন দুর্বলের উপর দৈবক্রমে দয়া বর্ষণ করেন তবে কখন কখন কেউ কেউ বিচার পেয়েও থাকে। এতোটুকু শুধু জঙ্গলের পশু সমাজ থেকে এমন রাষ্ট্রের পার্থক্য।

সভ্যতা চূড়ায় আরোহণ করা বিশ্বে এখনো এমন পশু সমাজ বৈশিষ্ট্যের রাষ্ট্রগুলো কিভাবে টিকে আছে, সেটাই উত্তরহীন আশ্চর্য প্রশ্ন?

Admin

Amir hossain is a social article writer. he likes to share knowledge and Interested research content of biodiversity, climate, travel, photography

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form