চেয়ারম্যানের চাল ভাগ

এক গ্রামে ছিলো এক চেয়ারম্যান। তার ছিলো ছয় মেম্বার। চেয়ারম্যান বেজায় চতুর হলেও তার মেম্বার গুলো ছিলো সাধাসিধে। জনগনের রিলিফের মাল লুট-পাট করতে মেম্বারদের কে হাতে রাখতে হতো চেয়ারম্যানের। তাই মালের ভাগ মেম্বারদের ও দিতে হতো। তবে সে সব সময় এই ধান্ধায় থাকতো যে কিভাবে মেম্বারদের ফাঁকি দিয়ে নিজে বেশী খাওয়া যায়। একবার জনগনের জন্য ৪৯ মণ চাল এলো। চেয়ারম্যান ঠিক করল এটা পুরোটাই তারা মেরে দিবে। জনগনকে কিছুই দেবে না। সেই মতো মেম্বারদের ডেকে সে বললো- আমরা সাত জনে সমান ১৬ মণ কইরা পামু। তো আমার ভাগের ১৬ মণ আমি রাইখা দিসি।বাকি চাল নিয়া ১৬ মণ কইরা প্রত্যেকে ভাগ কইরা নে! এই বলে চেয়ারম্যান বাকি ৩৩ মণ (৪৯-১৬ = ৩৩) গম মেম্বারদের দিয়া দিলো। মেম্বাররা বাসায় গিয়ে মাপতে গিয়ে পরলো মহা বিপদে। দুই জনকে ১৬ মণ কইরা গম দেবার পর বাকি থাকে মাত্র ১ মণ, অথচ চেয়ারম্যান কইলো যে সবাই ১৬ মণ কইরা গম পাইবো! কেমতে কি? চল তো চেয়ারম্যানের কাছে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের অভিযোগ শুনেই রেগে গেলেন। বলে- গর্ধভের দল। সামান্য কয় মন চাল তোরা ভাগ করতে পারস না, তোদের লইয়া সমাজে চলুম ক্যামতে? আমার মান- ইজ্জত তো প্লাস্টিক হইয়া যাইব। আইচ্ছা খাতা কলম ল। চেয়ারম্যান বলে- আমরা মানুষ সাত জন, প্রত্যেকে ১৬ মণ কইরা চাল পামু ঠিক? ত খাতায় একটার নিচে আরেকটা এমন কইরা ৭ বার ১৬ লেখ।

মেম্বার লিখলো-
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬

চেয়ারম্যান - কই লিখছস্ִ? এই বার দেখ ডান দিকে ৭ টা ছয় না ? তো ৭ টা ছয় এক লগে যোগ করলে কত হয়? ৪২। আইচ্ছা অইটা একটা টান দিয়া নিচে লেখ।

মেম্বার লিখে-
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
--------
৪২

চেয়ারম্যান বলে- এইবার বাম দিকে থাকা কয়টা ১ দেখা যায়? ৭ টা না। তাহলে ৭ টা ১ যোগ করলে কত হয়? ৭ না? এই ৭ এখন ৪২ এর নিচে লিখা যোগ কইরা দেখ, হাসমতের দল।

মেম্বার লিখে-
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
১৬
--------
৪২

---------
৪৯

চেয়ারম্যান বলে- দেখলি তো গর্ধভের দল, ১৬ মণ সাতবার যোগ করলে ৪৯ মণ হয়। সেই হিসাবে আমাদের ৭ জনের প্রত্যেকের ১৬ মণ কইরা চাল পাবার কথা। যা বাড়ি গিয়া ভালো কইরা মাপ। চেয়ারম্যানের কথা শুইনা মেম্বাররা ফিরে এলো। ভাবলো চেয়ারম্যান জ্ঞানি মানুষ! ভুল মনে হয় আমাদেরই হইসে। কিন্তু মাপতে গিয়া সেই একই বিভ্রাট। আবার সিদ্ধান্ত করল, চল চেয়ারম্যানের কাছে যাই।চেয়ারম্যান আবার ক্ষ্যাপছে! এই সামান্য জিনিষটা বুঝস না, তোদের দিয়া জনসেবা ক্যামনে হইবো। আইচ্ছা খাতা নে, লেখ। প্রথমে ১৬ লেখ, এর নিচে পুরন চিন্হ দিয়া লেখ ৭। এরপর একটা টান দে।

মেম্বার লিখে-
১৬
x ৭
-------

চেয়ারম্যান বলে- আইচ্ছা ১৬ এর ডানদিকে আছে ৬, এই ৬ রে নিচের ৭ দিয়া গুন করলে কত হয়? ৪২ না? লেখ ৪২।

মেম্বার লিখে-
১৬
x ৭
--------
৪২

চেয়ারম্যান বলে- এইবার বাম দিকের ১ রে ৭ দিয়া গুন করলে কত হয়? ৭ না? এই ৭ টা ৪২ এর নিচে লেখ। এরপর যোগ কইরা দেখ।

মেম্বার লিখে-
১৬
x ৭
------
৪২

+ ৭
------
৪৯

চেয়ারম্যান বলে- বলদের দল! যা বাড়িতে গিয়া ঠিক মতো ভাগ কর! চেয়ারম্যানের ঝাড়ি খাইয়া সাধাসিধা মেম্বাররা আবার ফিরে আসে। আবার মাপ দেয়, কিন্তু হিসাব মেলে না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে, সাহস সন্চয় করে আবার তারা এলো চেয়ারম্যান এর কাছে। চেয়ারম্যান তো পারলে মারে এইবার। বলে মুর্খের দল তোদের মেম্বার বানাইসে কে? নে খাতা নে, দুই পাশে দুই টা ব্রাকেট দে। মাঝখানে লেখ ৪৯ আর বাম পাশে লেখ ৭, এই বার বল ৭ এক এ কত হয়? ৭ না? তাহলে এইটা ৪৯ এর নিচে লেখ।

মেম্বার লিখে-
৭) ৪৯ ( ১

-------

চেয়ারম্যান বলে- এই বার ৪৯ থেকে বাদ গেলো ৭। তাহলে থাকে কত? ৪২ না? এইটা নিচে লেখ। এই ৪২ কে ৭ দিয়া ভাগ করলে কত হয়? ৬ না? এইটা ভাগফলের ১ এর পাশে লেইখা দেখ কত হয়?

মেম্বার লিখে -
৭ ) ৪৯ ( ১৬
- ৭
-------------
৪২
- ৪২
------


চেয়ারম্যান - এক জিনিষ আর কতবার । একবার যোগ দিয়া, একবার গুণ দিয়া, একবার ভাগ দিয়া বুঝাইলাম। এখন যদি তোরা অংক ই না বুঝস তো আমি কি করুম? যা বাড়ী যা যেমনে পারস ভাগ কইরা ল। নইলে নিজেরা কামড়া-কামড়ি কইরা মর! খবরদার আমারে আর জ্বালাবি না।

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
এই গল্পের চরিত্র বা ঘটনার সাথে কেউ যদি বাস্তবের মিল খুঁজতে গেলে সেটা তার নিজস্ব মস্তিষ্কের অতিরিক্ত উর্বরতা (আই মিন মাথায় গোবরের পরিমান বেশি) বলে ধরা হবে। এজন্য লেখককে দায়ী করা যাবে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form