কোথায় পাব তারে?

মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে কতটুকুই বা চিনতে পারি আমরা? কয়জন মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনি আসলেই আপনাকে চেনেন? কিংবা আপনি আসলেই জানেন আপনি কি চান কেন চান? খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত আছে। তারা মহামানব শ্রেণীর। বাকি বেশিরভাগই আমার মতন অভাগা টাইপ মানুষ। আমরা আসলেই জানিনা আমরা কি চাই? কি আমাদের উদ্দেশ্য? আমরা শুধু একটা জিনিষেরই খোজ করি সম্ভবত, সুখ কিংবা শান্তির। কিন্তু কিসে সেই সুখ বা শান্তি, তা খুজে দেখার চেষ্টা কি আসলেই করতে পারি? চেষ্টাতো করতেই থাকি, কিন্তু সঠিক পথে কি সেই চেষ্টা চলছে? অনেক গুলো প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে কি? সেই প্রশ্ন গুলো খুব কঠিন কিছু নয় সহজ সরল স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কি আপনার কাছে এত সহজ সরল আকারে রয়েছে? মনে হয় না আছে। থাকলে ওই যে বললাম আমরা সবাই মহামানব শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যেতাম। চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, কিংবা আশার সমাপ্তি ঘটত আমাদের।
কোথায় পাব তারে? খুজে বেড়াই কু-পথে
মানুষের মাঝেই লুকানো রয়েছে সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ, যার কোন হদিসই আমরা রাখি না বা খুজে পাইনা কিংবা খুজতে চাইও না। কিন্তু আমরা যেইসব জিনিষের পিছনে ছুটতে থাকি তা কি আমাদেরকে শান্তিতে রাখছে? যদি কোন কিছু আমাদেরকে সুখে শান্তিতেই রাখতো তবে একটার পরে আরেকটার পিছনে নিশ্চয়ই আবার ছুটে চলতাম না। অন্ধের মতন আমরা সুখের আশায় কিছুনা কিছু একটার পিছনে ছুটতেই থাকি। কিন্তু আসলেই সুখ পাখি কি অন্য কিছুর মাঝে রয়েছে? মনে হয় না। তবে কেউ না কেউ এতদিনে আবিষ্কার করেই ফেলতেন সুখ আসলে নির্দিষ্ট কিংবা নির্দেশিত হয়ে যেত সকলের কাছে সকলের জন্যে। হয়ত কোন কিছু একটার বিনিময়ে বিকিকিনি চলত সেই সুখের। হয়ত নতুন কোন একক আবিষ্কার হয়ে যেত সুখের। কয়েক ছটাক সুখের দাম হয়ত হয়ে পরত নিজের সমগ্র জীবনের কামাই। তারপরেও মানুষ নামের এই আজীব প্রাণী ঠিকই হয়ত সুখ কিনেই ফেলত। কিন্তু সত্যি কথা বলতে সুখের কোন সঙ্গা বা সন্ধান কখনোই আবিষ্কৃত হয়নি বা হবেও না। কারণ সেই সুখ আমাদের নিজের মাঝেই নিহিত, নিজের দিকে তাকানোর মতন সময় কিংবা ইচ্ছা আমাদের কখনোই থাকেনা। আমরা সাধারণত পরের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী। অন্যের দিকেই তাকাতে বা অন্য কিছুর দিকেই তাকাতে সাচ্ছন্দ বোধ করি। কিন্তু একটু খেয়াল করেই যদি দেখতে পেতাম যে, যেই সুখের আশায় সম্পদের লোভে আমরা ছুটে চলেছি তার অবস্থান কি আমার কাছেই নেই তো? তবে হয়তো আমাদের এই ছুটে চলার অবসান ঘটতো। হয়ত সুখের সন্ধান মিলতো। ধরা দিত সুখ পাখি।

মানুষের সবচাইতে অমূল্য রত্ন হল মানুষের মন। এই মনকেই যদি চিনতে পারা সম্ভব হয় তবেই মানুষ হয়। নয়ত মানুষের খোলসের ভিতরে অন্য কিছু বাস করে। মনের উপরে যতটুকু নিয়ন্ত্রণ মানুষের আছে বা থাকবে সে ততটুকুই মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার সামর্থ্য রাখে। মন আজব এক জিনিষ। না আছে এর কোন অস্তিত্ব, না আছে এর কোন অবস্থান। মানুষকে প্রস্থচ্ছেদ কিংবা ব্যাবচ্ছেদ কোন কিছু করে, কোন ভাবেই এই মনের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তার পরেও আমরা সবাই জানি আমাদের উপরে কতটুকু প্রভাব এই মন নামক জিনিষটার। নিজের প্রভাব সে প্রতিনিয়ত আমাদের উপরে বিস্তার করে যাচ্ছে, কিন্তু নিজের দেহে বসবাস অথচ আমরা তাকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিয়ে জন্মাইনি। এই ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। যদি নিজের মনের উপরে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় তবেই মানুষ পরিণত হয়, তবেই মানুষ অমূল্য রতনের সন্ধান পায়, তবেই মানুষ সত্যিকারের মানুষ হিসেবে প্রকাশ পায়। নয়ত অন্ধের মতন নিজের সুখ শান্তির খোজে একটার পরে একটা কিছু খুজতেই থাকে। সেই খোজার অবসান ঘটে একমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমেই। মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই। এই কথাটুকুর একমাত্র কারণই সে আসলেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানুষ নিজের মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তখনই মানুষের পরিপূর্ণতা যখন সে পরিপূর্ণরূপে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে। সেই ক্ষমতা কবে অর্জন করতে পারবো জানিনা, হয়তো কখনোই পারবোনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form