বাংলার খেয়ে ঢেকুর তোলে ভারতের। দেশের আলো বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশের চাইতে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। এরাই ‘‘ভারতীয় দালাল’’।
‘‘ভারতীয় দালাল’’ উপদ্রবটি নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানে এই ‘উপদ্রব’ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বিশাল বিষবৃক্ষের আকার ধারণ করে জাতির জীবন যেমন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তেমনি বিপন্ন করে তুলেছে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রিক নিরাপত্তাকে। এই উপদ্রবটির নাম ‘‘ভারতীয় দালাল’’।
সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভা, উপদেষ্টা পরিষদ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসন, অর্থনীতি এবং রাজনীতির মতো প্রতিটি অঙ্গনে এরা অপ্রতিহত গতিতে বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, এই দালালরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে নিজ মাতৃভূমির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গাইতে লজ্জা করছে না। এখনই যদি এদের নির্মূল করার ব্যাপারে দেশবাসী উদ্যোগ না নেয়, তাহলে দেশ ও জাতির কপালে অশেষ দুঃখ আছে।
আমাদের দেশে একটা প্রচলিত রোগও ইদানীং মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললেই সাধারণত ধরে নেয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার দুর্গন্ধ ছড়ানোর প্রয়াস। ভারতীয় দালালরা এরকম ধারণা বিস্তারে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে অনেকে সাম্প্রদায়িক হওয়ার ভয়ে সত্য কথা’টি বলতে লজ্জা বোধ করেন। অনেকে আবার মনে করেন, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে তার ইহলৌকিক প্রতিপত্তি লাভ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি ‘‘পাকিস্তানপন্থী’’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। এরকম ভয়, দ্বিধা ও হীনমন্যতার সুযোগ ১৬ আনা নিচ্ছে ভারতীয় দালালরা। তাদের বড় সুবিধা হলো তাদের হাতে মিডিয়া আছে। আছে মাথার ওপর ক্ষমতাধর ‘‘সরকার’’।
কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে জোর দিয়ে বলছি, ভারতবিরোধিতা মানে পাকিস্তানপন্থী হওয়া নয়। ভারতবিরোধিতা নামে সাম্প্রদায়িকতাও নয়। ভারতবিরোধিতা মানে ভারতের মেহনতি জনগণের বিরুদ্ধেও দাঁড়ানো নয়। আবার অর্থহীন বিরোধিতা করে একটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্থায়ী শত্রুতাও পুষে রাখা নয়। আমরা অবশ্যই ভারতের বন্ধুত্ব চাই, তবে তা হতে হবে সমান মর্যাদা ও সম্মানের ভিত্তিতে। আসলে ভারতীয় দালাল নির্মূল নির্মূল প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও নয়। এ হলো একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নিজের অস্তিত্ব, ঐতিহ্য, ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকার অতি জরুরি আকুতি। এই আকুতির অন্তরগত যে চেতনা তা প্রাণ ধারণ করেছে আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তর থেকে। এর পাশাপাশি রয়েছে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আমাদের পূর্ব-পুরুষদের অপরিসীম ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। সেই সব পাতা ঘেঁটে দেখা যায়, যতবার বাংলাদেশ মোকাবেলার পথে গেছে ততবারই সে মহিমান্বিত হয়েছে। আর যখন দালালরা আমাদের নিয়ে গেছে আপস ও নতজানু বন্ধুত্বের দিকে, তখনই দাসত্বের শিকল ঝুলেছে জাতির গলায়। আর আঘাত বার বার যেখান থেকে এসেছে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মূল কেন্দ্র অতীতেও ছিল দিল্লি, এখনও।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজ এভাবে কথাগুলো লিখতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। কিন্তু উপায় কি? অসুখ হলে ওষুধের ব্যবস্থা তো করতেই হবে। জাতির সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে আজ বিষাক্ত ভাইরাস। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করা না গেলে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে এদেশীয় ‘লেন্দুপ দরজীদের’ পরিকল্পনা। সেজন্য অসুখ চিহ্নিত করা যেমনি জরুরি, তেমনি সেই অসুখের সর্বশেষ বীজাণুগুলো খুঁজে বার করে সেগুলো নির্মূল করাও জরুরি।
অনেকে বলবেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কি ভারতীয় দালাল? প্রধান সমস্যা তো দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, দূষিত প্রশাসন, অঙ্গীকারবিহীন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বেকারত্ব ইত্যাদি। আমি বলব, এসব সমস্যা যেমন সত্যি তেমনি সবচেয়ে বড় সমস্যা ভারতীয় দালাল। জাতির প্রতিটি কল্যাণ, মঙ্গল, উন্নয়ন ও সম্প্রীতির গতিরোধ করে ক্রমান্বয়ে মাথা উঁচু করে তুলছে এই দালাল সম্প্রদায়। এরা বাংলাদেশকে নানা ছলছুঁতোয় বিভক্তি, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও হানাহানিতে লিপ্ত করে চাচ্ছে ব্যর্থ ও অকার্যকর তত্ত্বের বিকাশ ঘটাতে।
বাংলাদেশের জন্য আরও একটা দুঃখ, এখানে ভারতীয় দালাল আছে, পাকিস্তানি রাজাকার আছে, সৌদিপন্থী, চীনাপন্থী, মার্কিনপন্থী লোকজনও আছে, শুধু ১৭ কোটি মানুষের দেশে ‘বাংলাদেশপন্থী’ কেউ নেই। থাকলেও তারা চালকের আসনে বসে নেই। আছে গ্যালারিতে। এই গ্যালারির লোকগুলোকে আজ দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সিসাঢালা জাতীয় সংহতি গড়ে তুলে বাঁচাতে হবে দেশকে।
ভারত আমাদের সম্পদ লুট করেছিল ১৯৭১ সালে। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে হত্যা করেছে পদ্মাকে। অভিন্ন ৫৪টি নদীতে দিয়েছে বাঁধ, বিনষ্ট হয়েছে পরিবেশ। মরে গেছে শত শত নদী। এখন টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে শুকিয়ে মারতে চাচ্ছে সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনাকে। তারা তাদের দালালদের দিয়ে আদায় করে নিয়েছে করিডোর। এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ভারতের প্রেসক্রিপশন মতো। সীমান্তে বিনা বিচারে প্রতিদিন পাখির মতো গুলি করে মারছে বাংলাদেশীদের। লাশ ঝুলিয়ে রাখছে কাঁটাতারে। সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের জন্য শতাধিক ফ্যাক্টরিতে ফেনসিডিল তৈরি করে পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে। গরু চোরাচালানি কিংবা সাধারণ কৃষক বিএসএফের গুলিতে মারা গেলেও আজ পর্যন্ত কোন মাদক ব্যবসায়ীকে তারা হত্যা করেনি। কাঁটাতার দিয়ে একটি বন্ধু দেশকে খাঁচার মধ্যে পশুর মতো আটকে রেখে দাবি করছে বন্ধুত্ব। বাংলাদেশের কৃষিখাতকে সর্বনাশের কিনারে ঠেলে দিয়ে করা হয়েছে ভারতনির্ভর। শিল্প-কারখানা গুলোতে জ্বলছে লালবাতি। আর ভারতীয় দ্রব্যাদি দিয়ে পূর্ণ এদেশ। অনাবৃত আকাশ দিয়ে গলিত পুঁজের মতো ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সংস্কৃতি। পাড়ায় পাড়ায় ভিডিওর দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে শাহরুখ, ঐশ্বরিয়া রাই, হৃত্মিক রোশন আর ক্যাটরিনাদের বিজাতীয় কর্মকাণ্ড। সুপার মার্কেটগুলো ভারতের পণ্য বিক্রির সেন্টার। বাদ বাকি যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটি ছিল আমাদের, তাকেও হত্যা করার জন্য এখন অবাধে চলছে ভারতীয় ছবি। হিন্দির পাশাপাশি চলছে বাংলার ওপর বাংলার আগ্রাসন। বইয়ের দোকানগুলোতে এখন তো কেবল ভারতীয় বই। শিক্ষাঙ্গনগুলোকে করা হয়েছে রণক্ষেত্র। আর প্রতিবছর লক্ষাধিক ছেলেমেয়ে তথাকথিত উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যাচ্ছে ভারতে। ফেরার পথে তারা ফিরছে ভিন্ন মানুষ হয়ে। বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের বিরাট অংশ ভারতের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য লালায়িত। তারাই ভারতের ইশারায় বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বানানোর জন্য প্রতিনিয়ত রচনা করে গবেষণাপত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাভাবে খাড়া হয়েছে ভারতীয় সংগঠন। উল্টোদিকে ভারত থেকে আমরা পেয়েছি মিথ্যাচার, বন্ধুত্বের ফাঁকা বুলি আর আশ্বাস। অন্তঃসারশূন্য আশ্বাস। এক ফোঁটা পানি আমরা পাইনি। শান্তি বাহিনীর লালন-পালন করেনি ত্যাগ। বন্ধ করেনি সীমান্ত হত্যা, বাঁধ নির্মাণ। বাংলাদেশের দ্রব্যাদির ভাগ্যেও জোটেনি শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার। সিনেমা তো দূরের কথা। তারপরও দালালরা ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্বের গান গাইবে। বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তানি দালালদের বিচার হচ্ছে, সেই সাথে জাতির আরেক সংকট ভারতীয় দালাল মুক্ত দেশ গড়ে আরেকটি অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশ।
‘‘ভারতীয় দালাল’’ উপদ্রবটি নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানে এই ‘উপদ্রব’ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বিশাল বিষবৃক্ষের আকার ধারণ করে জাতির জীবন যেমন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তেমনি বিপন্ন করে তুলেছে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রিক নিরাপত্তাকে। এই উপদ্রবটির নাম ‘‘ভারতীয় দালাল’’।
সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভা, উপদেষ্টা পরিষদ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসন, অর্থনীতি এবং রাজনীতির মতো প্রতিটি অঙ্গনে এরা অপ্রতিহত গতিতে বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, এই দালালরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে নিজ মাতৃভূমির বিরুদ্ধে ভারতের পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গাইতে লজ্জা করছে না। এখনই যদি এদের নির্মূল করার ব্যাপারে দেশবাসী উদ্যোগ না নেয়, তাহলে দেশ ও জাতির কপালে অশেষ দুঃখ আছে।
আমাদের দেশে একটা প্রচলিত রোগও ইদানীং মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললেই সাধারণত ধরে নেয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার দুর্গন্ধ ছড়ানোর প্রয়াস। ভারতীয় দালালরা এরকম ধারণা বিস্তারে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে অনেকে সাম্প্রদায়িক হওয়ার ভয়ে সত্য কথা’টি বলতে লজ্জা বোধ করেন। অনেকে আবার মনে করেন, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে তার ইহলৌকিক প্রতিপত্তি লাভ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি ‘‘পাকিস্তানপন্থী’’ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। এরকম ভয়, দ্বিধা ও হীনমন্যতার সুযোগ ১৬ আনা নিচ্ছে ভারতীয় দালালরা। তাদের বড় সুবিধা হলো তাদের হাতে মিডিয়া আছে। আছে মাথার ওপর ক্ষমতাধর ‘‘সরকার’’।
কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে জোর দিয়ে বলছি, ভারতবিরোধিতা মানে পাকিস্তানপন্থী হওয়া নয়। ভারতবিরোধিতা নামে সাম্প্রদায়িকতাও নয়। ভারতবিরোধিতা মানে ভারতের মেহনতি জনগণের বিরুদ্ধেও দাঁড়ানো নয়। আবার অর্থহীন বিরোধিতা করে একটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্থায়ী শত্রুতাও পুষে রাখা নয়। আমরা অবশ্যই ভারতের বন্ধুত্ব চাই, তবে তা হতে হবে সমান মর্যাদা ও সম্মানের ভিত্তিতে। আসলে ভারতীয় দালাল নির্মূল নির্মূল প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও নয়। এ হলো একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নিজের অস্তিত্ব, ঐতিহ্য, ইতিহাস, ভূগোল ও সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকার অতি জরুরি আকুতি। এই আকুতির অন্তরগত যে চেতনা তা প্রাণ ধারণ করেছে আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তর থেকে। এর পাশাপাশি রয়েছে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আমাদের পূর্ব-পুরুষদের অপরিসীম ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। সেই সব পাতা ঘেঁটে দেখা যায়, যতবার বাংলাদেশ মোকাবেলার পথে গেছে ততবারই সে মহিমান্বিত হয়েছে। আর যখন দালালরা আমাদের নিয়ে গেছে আপস ও নতজানু বন্ধুত্বের দিকে, তখনই দাসত্বের শিকল ঝুলেছে জাতির গলায়। আর আঘাত বার বার যেখান থেকে এসেছে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মূল কেন্দ্র অতীতেও ছিল দিল্লি, এখনও।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজ এভাবে কথাগুলো লিখতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। কিন্তু উপায় কি? অসুখ হলে ওষুধের ব্যবস্থা তো করতেই হবে। জাতির সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে আজ বিষাক্ত ভাইরাস। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করা না গেলে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে এদেশীয় ‘লেন্দুপ দরজীদের’ পরিকল্পনা। সেজন্য অসুখ চিহ্নিত করা যেমনি জরুরি, তেমনি সেই অসুখের সর্বশেষ বীজাণুগুলো খুঁজে বার করে সেগুলো নির্মূল করাও জরুরি।
অনেকে বলবেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কি ভারতীয় দালাল? প্রধান সমস্যা তো দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, দূষিত প্রশাসন, অঙ্গীকারবিহীন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বেকারত্ব ইত্যাদি। আমি বলব, এসব সমস্যা যেমন সত্যি তেমনি সবচেয়ে বড় সমস্যা ভারতীয় দালাল। জাতির প্রতিটি কল্যাণ, মঙ্গল, উন্নয়ন ও সম্প্রীতির গতিরোধ করে ক্রমান্বয়ে মাথা উঁচু করে তুলছে এই দালাল সম্প্রদায়। এরা বাংলাদেশকে নানা ছলছুঁতোয় বিভক্তি, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও হানাহানিতে লিপ্ত করে চাচ্ছে ব্যর্থ ও অকার্যকর তত্ত্বের বিকাশ ঘটাতে।
বাংলাদেশের জন্য আরও একটা দুঃখ, এখানে ভারতীয় দালাল আছে, পাকিস্তানি রাজাকার আছে, সৌদিপন্থী, চীনাপন্থী, মার্কিনপন্থী লোকজনও আছে, শুধু ১৭ কোটি মানুষের দেশে ‘বাংলাদেশপন্থী’ কেউ নেই। থাকলেও তারা চালকের আসনে বসে নেই। আছে গ্যালারিতে। এই গ্যালারির লোকগুলোকে আজ দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সিসাঢালা জাতীয় সংহতি গড়ে তুলে বাঁচাতে হবে দেশকে।
ভারত আমাদের সম্পদ লুট করেছিল ১৯৭১ সালে। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে হত্যা করেছে পদ্মাকে। অভিন্ন ৫৪টি নদীতে দিয়েছে বাঁধ, বিনষ্ট হয়েছে পরিবেশ। মরে গেছে শত শত নদী। এখন টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে শুকিয়ে মারতে চাচ্ছে সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনাকে। তারা তাদের দালালদের দিয়ে আদায় করে নিয়েছে করিডোর। এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ভারতের প্রেসক্রিপশন মতো। সীমান্তে বিনা বিচারে প্রতিদিন পাখির মতো গুলি করে মারছে বাংলাদেশীদের। লাশ ঝুলিয়ে রাখছে কাঁটাতারে। সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের জন্য শতাধিক ফ্যাক্টরিতে ফেনসিডিল তৈরি করে পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে। গরু চোরাচালানি কিংবা সাধারণ কৃষক বিএসএফের গুলিতে মারা গেলেও আজ পর্যন্ত কোন মাদক ব্যবসায়ীকে তারা হত্যা করেনি। কাঁটাতার দিয়ে একটি বন্ধু দেশকে খাঁচার মধ্যে পশুর মতো আটকে রেখে দাবি করছে বন্ধুত্ব। বাংলাদেশের কৃষিখাতকে সর্বনাশের কিনারে ঠেলে দিয়ে করা হয়েছে ভারতনির্ভর। শিল্প-কারখানা গুলোতে জ্বলছে লালবাতি। আর ভারতীয় দ্রব্যাদি দিয়ে পূর্ণ এদেশ। অনাবৃত আকাশ দিয়ে গলিত পুঁজের মতো ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সংস্কৃতি। পাড়ায় পাড়ায় ভিডিওর দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে শাহরুখ, ঐশ্বরিয়া রাই, হৃত্মিক রোশন আর ক্যাটরিনাদের বিজাতীয় কর্মকাণ্ড। সুপার মার্কেটগুলো ভারতের পণ্য বিক্রির সেন্টার। বাদ বাকি যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটি ছিল আমাদের, তাকেও হত্যা করার জন্য এখন অবাধে চলছে ভারতীয় ছবি। হিন্দির পাশাপাশি চলছে বাংলার ওপর বাংলার আগ্রাসন। বইয়ের দোকানগুলোতে এখন তো কেবল ভারতীয় বই। শিক্ষাঙ্গনগুলোকে করা হয়েছে রণক্ষেত্র। আর প্রতিবছর লক্ষাধিক ছেলেমেয়ে তথাকথিত উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যাচ্ছে ভারতে। ফেরার পথে তারা ফিরছে ভিন্ন মানুষ হয়ে। বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের বিরাট অংশ ভারতের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য লালায়িত। তারাই ভারতের ইশারায় বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বানানোর জন্য প্রতিনিয়ত রচনা করে গবেষণাপত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাভাবে খাড়া হয়েছে ভারতীয় সংগঠন। উল্টোদিকে ভারত থেকে আমরা পেয়েছি মিথ্যাচার, বন্ধুত্বের ফাঁকা বুলি আর আশ্বাস। অন্তঃসারশূন্য আশ্বাস। এক ফোঁটা পানি আমরা পাইনি। শান্তি বাহিনীর লালন-পালন করেনি ত্যাগ। বন্ধ করেনি সীমান্ত হত্যা, বাঁধ নির্মাণ। বাংলাদেশের দ্রব্যাদির ভাগ্যেও জোটেনি শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার। সিনেমা তো দূরের কথা। তারপরও দালালরা ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্বের গান গাইবে। বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তানি দালালদের বিচার হচ্ছে, সেই সাথে জাতির আরেক সংকট ভারতীয় দালাল মুক্ত দেশ গড়ে আরেকটি অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশ।