বউ শ্বাশুড়ীর যুদ্ধ

জরিনাকে বিয়ে করে তার স্বামী এবং শ্বাশুড়ীর সাথে বসবাস করতে লাগল। কিছু দিনের মধ্যেই দেখল যে তার শ্বাশুড়ীর সাথে বসবাস করাটা প্রায় অসম্ভব। ক্রমশ তাদের মধ্যে মতনক্য আর ঝগড়া শুরু হয়। শ্বাশুড়ী প্রায়ই তার ছেলের বউ জরিনাকে কটাক্ষ করতো বিভিন্ন কাজে। সপ্তাহ গেল মাস পার হয়ে গেল কিন্তু তাদের বিবাদ দিনেদিনে বাড়তেই থাকল। এ সমস্ত ঘটনা ক্রমেই জরিনার স্বামীকেকে হতাশাগ্রস্থ করে তুলল। জরিনা কোনভাবেই তার শ্বাশুড়ীর এই খারাপ আচরন বরদাস্ত করতে পারতে ছিলনা। এক সময় জরিনা সিদ্ধান্ত নিল কিছু একটা করতেই হবে। একদিন জরিনা তার বাবার এক বিশ্বস্ত বন্ধু ডাক্তারের কাছে গেল, যার একটা ফার্মেসি রয়েছে। জরিনা তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো এবং তার কাছে বিষ চাইলো যা দিয়ে তার শ্বাশুড়ীকে মেরে ফেলে এ সমস্ত সমস্যার সমাধান করা যায়। ডাক্তার কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন- জরিনা, আমি তোমাকে সাহায্য করবো। তোমার সমস্যার সমাধান করবার জন্য। কিন্তু আমি তোমাকে যা যা বলবো তাই তোমাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। জরিনা খুশি মনে তার কথায় রাজী হয়ে গেলো। ডাক্তার পেছনের রুমে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে একটা ঔষধের প্যাকেট নিয়ে। তিনি জরিনাকে বললেন- তোমার শ্বাশুড়ীকে মেরে ফেলবার জন্য এমন কোন বিষ দেয়া উচিৎ হবেনা, যা অতি তারাতাড়ি তাকে মেরে ফেলবে। এতে লোকের সন্দেহ তোমার উপর পরবে। তাই আমি তোমাকে এমন একটা ঔষধ দিচ্ছি যা তোমার শ্বাশুড়ীর শরীরে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া করবে। প্রতিদিন তার খাবারের সাথে অল্প অল্প করে মিশিয়ে দিবে। এটার কার্যকারীতা শুরু হতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে, আর তুমি তোমার শ্বাশুড়ীর সাথে এতদিন ভাল ব্যবহার করতে থাক। যাতে লোকের সন্দেহ কোনক্রমেই তোমার উপর না পরে।কখনই তার সাথে তর্ক করবেনা, তার প্রতিটি ইচ্ছা পুরণ করবে এবং তার সাথে ভাল আচরণ করবে। জরিনা খুবই খুশী হল। সে ডাক্তারকে ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ীতে ফিরে এল তার শ্বাশুরীকে হত্যা করার কাজ শুরু করল।সপ্তাহ পার হয়ে মাস পার হয়ে গেল, জরিনা তার ঔষধ শ্বাশুড়ীকে নিয়ম করে খাওয়াতে লাগল। সে সবার সন্দেহের উর্দ্ধে থাকবার জন্য ডাক্তারের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে লাগলো। সে তার রাগকে দমন করলো, তার শ্বাশুড়ীর সমস্ত আদেশ পালন করতো এবং তার সাথে আচরণ করত তার নিজের মায়ের মতই।
বউ শ্বাশুড়ীর ঝামেলা
ছয়মাস পর পুরো ঘরের দৃশ্যপট পাল্টে গেল। জরিনা তার রাগকে এতটাই দমন করা শিখে গেল যে, সে আর তেমন করে উত্তেজিতই হতে পারত না। তার সাথে তার শ্বাশুড়ীর এই ছয়মাসে কোন তর্কই বাধল না, আর এখন জরিনা তার শ্বাশুড়ীর সাথে অনেক বেশী ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠল। জরিনার প্রতি তার শ্বাশুড়ীর আচরণ পরিবর্তন হল। তিনি জরিনাকে তার মেয়ের মতই ভালবাসতে শুরু করলো।তিনি তার আত্মীয় স্বজনদেরকে বলতে লাগলেন, পৃথিবীতে যত বউ আছে তার মধ্যে জরিনা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। জরিনা এবং তার শ্বাশুড়ী মেয়ে এবং মায়ের মতই বাস করতে লাগল। অবস্থা দেখে জরিনার স্বামী খুব খুশি হয়ে গেল। জরিনা আবার ডাক্তারের কাছে সাহায্যের জন্য আসল। সে ডাক্তারকে বলল- আপনার বাকি ঔষধ ফিরিয়ে নিন এবং যতটুকু ক্ষতি আমার শ্বাশুড়ীর হয়েছে তা কাটানোর ঔষধ দিন। তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং এখন তাকে আমি আমার মায়ের মতই ভালবাসি। ডাক্তার হেসে বললেন- জরিনা, ভয় পাবার কোন কারন নেই। আমি তোমাকে কোন বিষ দেইনি। যেটা দিয়েছিলাম সেটা ছিল একপ্রকার ভিটামিন। যা তোমার শ্বাশুড়ীর স্বাস্থ্য ভাল হতে সাহায্য করেছে। বিষ ছিল তোমার মনে এবং তোমার আচরণে, যেটা তুমি পুরোপুরি ধুয়ে ফেলেছ তাকে ভালবেসে।

যে যাকে যতটুকু ভালবাসা দেবে, প্রতিদানে ততটুকু ভালবাসাই পাবে। আপনি যেমন ব্যবহার করবেন, তার থেকে ভালো ব্যবহার আপনি আশা করতে পারেন কি? ভালো ব্যবহারই মানুষকে সুন্দর ও সুখী পথের নির্দেশনা দেয়।

Admin

Amir hossain is a social article writer. he likes to share knowledge and Interested research content of biodiversity, climate, travel, photography

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form