হে নবাগত

ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম কাজ হলো নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামাত দেওয়া। এই পৃথিবীতে প্রচলিত বিধান হচ্ছে, আজান এবং ইকামত দেয়া হয় নামাজের জন্য। আজান এবং ইকামত দেয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে বাকি থেকে যায় শুধু নামাজ। তো প্রশ্ন আসতেই পারে, জন্মের পরপরই নবজাতকের কানে এই আজান এবং ইকামত দেয়া হয় এই আজান এবং ইকামতের নামাজ কখন আদায় করা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর আমার নিকট মনে হচ্ছে- জন্মের পরপরই নবজাতকের কানে যে আজান এবং ইকামত দেয়া হয়ে থাকে, তারপরে সামান্য সময় অপেক্ষা করতে হয় আমাদের। একসময় অভিনব একটি নামাজের দৃশ্য আমরা ঠিকই প্রত্যক্ষ করি, যাকে বলা হয় ''জানাজার নামাজ''। জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে অন্যদের দ্বারা ''জানাজার নামাজ'' আদায় করার মাধ্যমেই জন্মের পরপরই কানে দেয়া সেই আজান এবং ইকামতের জবাবটি দেয়া হয়ে থাকে। বিচিত্র নিয়ম, নবজাতকের জীবদ্দশায় যে নামাজটি পড়ার সুযোগ তার আর থাকে না। নামাজ পড়তে হয় তাকে ছাড়াই। তারই জন্য অন্যরা নামাজ আদায় করেন তাকে সামনে রেখে।

আহ! মসজিদের কোনে রক্ষিত খাটিয়ায় শুইয়ে দিয়ে কবরে রেখে আসার পূর্বক্ষনে জীবনাবসানের পরে নামাজের অপূর্ব দৃশ্য। কি অদ্ভূত ভাবনার বিষয়! কি দারুন চিন্তার বিষয়! কি বুঝা যায় এ থেকে? আমাদের বুঝে নিতে হবে, আমাদের জীবদ্দশায় আজান ইকামত তো হয়ে গেল, এখন বাকি রয়েছে নামাজের জন্য সকলের একত্রিত হওয়া। জামাআতের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হওয়া। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দেয়া হয়। অাজানের পরে কিছুক্ষন সময় দেয়া হয় মুসল্লীদের একত্রিত হওয়ার জন্য। যা খুবই সামান্য সময়। নবজাতকের বেলায়ও ঠিক একইরকম মনে হয় বিষয়টি। তার ক্ষেত্রেও সময়ের পরিমান খুবই অল্প। এ সময়ের কোনো টাইম লিমিট নেই। নির্ধারণ করে কিছুই জানিয়ে দেয়া হয় না কাউকে। আযান ইকামত ও নামাজ এই সময়দ্বয়ের মধ্যবর্তী সময়টুকুই মানুষের জীবন। অতি ক্ষুদ্র প্রতীক্ষার সময়ের জীবন। তারপরেই জামাআতে দাঁড়িয়ে যাবেন মুসল্লিগন।

আমার কেন যেন বারবার মনে হয়, নবজাতকের কানে এই আজান ইকামত দেয়ার অভিনব সুন্দর পদ্ধতি। এই আজান ইকামতের মাধ্যামে আজানের শুরুতে এবং শেষে ''আল্লাহু আকবার'' তথা ''আল্লাহ মহান'' শব্দ নতুন অতিথির কানে পৌঁছে দিয়ে তাকে যেন স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে- 'হে নবাগত! তোমাকে যিনি জীবন দিলেন সেই স্রষ্টাই মহান! তাঁর চেয়ে বড় আর কোন এলাহা নেই। পার্থিব জীবনে লোভ লালসায় পড়ে তাকে ভুলে যেয়ো না। তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ো না। সবে মাত্র যে পার্থিব জীবনে প্রবেশ করতে চলেছো তুমি। মনে রেখো, তা বড়ই প্রলুব্ধকর, বড়ই প্রবঞ্চনাকর। বড়ই বিপদসঙ্কুল। সুতরাং ভুলে যেয়ো না তোমার আসল পথ, আসল ঠিকানা, আসল আবাস। লোভের বশিভূত হয়ে বিপথে চলে বিপদে পড়ো না, এই অল্প সময়ের ক্ষুদ্রতম জীবনে। প্রস্তুতি নাও দীর্ঘ-দীঘল অচেনা পারকালীন অন্তহীন পথের সফরের'।

আমরা কি পেরেছি, আমাদের জীবনের ক্ষুদ্রতা এবং সংক্ষিপ্ততা অনুমান-অনুধাবন করতে? পেরেছি কি প্রস্তুতি নিতে অন্তহীন পরকালের সফরের যাত্রী হতে?

Admin

Amir hossain is a social article writer. he likes to share knowledge and Interested research content of biodiversity, climate, travel, photography

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form