উসমানী খিলাফাতের সুলতান মুরাদ

অটোম্যান সাম্রাজ্যের সুলতান মুরাদ ১৬২৩ খৃষ্টাব্দে মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স এগারো বছর। সুলতান মুরাদ ছিলেন উসমানী খিলাফাতের ইতিহাসে চতুর্থ মুরাদ। তরুণ বয়স হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উসমানী খিলাফাতের হারানো গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। খলীফা হয়ে তিনি দেখলেন যে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটতরাজ, রাহাজানি, বিভেদ, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যাবহারে জনগন অতিষ্ঠ। পুর্ববর্তী উচ্চ বিলাশী সুলতানদের ক্ষমতার অপব্যয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় তহবিল শূন্য, সৈন্যদল অবাধ্য ও উচ্ছৃংখল। সুলতান মুরাদ অতিগোপনে একটি নতুন সেনাদল গড়ে তোলেন। ছয় স্কোয়াড্রন অশ্বারোহী যোদ্ধা স্বেচ্ছায় তার বাহিনীতে যোগ দেয়। নতুন সৈন্যদের দ্বারা তিনি অবাধ্য ও উছৃংখল সৈন্যদেরকে শায়েস্তা করেন। তিনি দুর্নীতিপরায়ন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। অচিরেই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সুলতান মুরাদ ১৬৩৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুরাদ ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তাব্রিজ দখল করেন। ইতিমধ্যে ইরানীগণ বাগদাদ জয় করেন। বাগদাদ জয় ছিল চতুর্থ মুরাদের শাসনকালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা।
সুলতান মুরাদ ছিলেন উসমানী খিলাফাতের
ইতিহাসে চতুর্থ মুরাদ | Ottoman Empier
সুলতান মুরাদ
সুলতান মুরাদ (চতুর্থ), অটোম্যান সাম্রাজ্য শাসন করেছেন ১৬২৩ থেকে ১৬৪০ ইং সাল পর্যন্ত। তার শাসন আমলে  জনসাধারনের সার্বিক অবস্থা অবলোকনের উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে একাকী দু' একজন সঙ্গী নিয়ে প্রায়শই ছদ্মবেশে তার রাজ্যের লোকেদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বের হতেন। এক সন্ধ্যায় তিনি নিজে বিশেষ ভালো বোধ করছিলেন না বিধায় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধানকে তলব করলেন তার সঙ্গী হতে। ঘুরতে ঘুরতে তারা এক জনবহুল জায়গায় এসে দেখলেন, এক লোক রাস্তায় পড়ে আছে। সুলতান লাঠি দিয়ে খোঁচা মেরে বুঝতে পারলেন লোকটি মৃত, অথচ চারপাশে মানুষে গিজগিজ করলেও কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না বিষয়টি নিয়ে। সুলতান আশেপাশের লোকজনদের ডাকলেন। তারা এগিয়ে এলো। কিন্তু ছদ্মবেশে থাকায় কেউই চিনতে পারল না নিজেদের শাসককে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটা মরে পড়ে আছে, তবুও কেউ এগিয়ে আসছে না কেন? লোকটির পরিবারের কেউ নেই? ‘‘আরে এ তো একজন ব্যাভিচারী, মদ্যপ কুলাঙ্গার!’’ লোকগুলো বলে উঠল। ‘যাই হোক, সে তো আমাদের নবি (সাঃ)-এর উম্মাতেরই একজন, নাকি? এখন আমাকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করুন’- সুলতান বললেন। লোকেরা সুলতানের সাথে মৃত লোকটিকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসল, এরপর চলে গেল। সুলতান আর তার সহযোগী সেই প্রধান থেকে গেলেন। লোকটির স্ত্রী মৃতদেহকে দেখা মাত্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তিনি বলতে লাগলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় থাকবেন! ও আল্লাহর বান্দা, হে আমার প্রিয়তম স্বামী, আমি তো দেখেছি আপনি সবসময় কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন! সুলতান মহিলাটির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সবার থেকে যা কিছু শুনলাম, এরপরও সে নিষ্ঠাবান কীভাবে হয়?
যেখানে দুশ্চরিত্রের জন্য সে এতটাই ঘৃণিত যে ,তার মৃত্যু নিয়েও কারো মাথাব্যথা ছিল না?’
লোকটির স্ত্রী জবাব দিলেন, ‘আমি জানতাম এমনই হবে। তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় যেতেন ও পয়সায় যতটকু সম্ভব হতো, ততটুকু শরাব কিনে ঘরে নিয়ে আসতেন। এনেই সেগুলো নর্দমায় ফেলে দিতেন। তিনি বলতেন, ‘আমি আজ মুসলিমদের অল্পখানি বাঁচিয়ে দিলাম।’ তারপর তিনি কোনো পতিতাকে কিছু টাকা দিয়ে ঘরে নিয়ে আসতেন এবং ভোর পর্যন্ত তাকে কুরআন পাঠ করে শুনাতেন। তিনি বলতেন, ‘আজ আমি এক তরুণীকে এবং ঈমানদার কোনো যুবককে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়া থেকে বাঁচালাম।’
লোকেরা তাকে শরাব কিনতে ও পতিতালয়ে যেতে দেখত এবং এই কারণেই তারা তাকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলতে শুরু করে। আমি একদিন তাকে বললাম, ‘আপনি মারা গেলে না কেউ গোসল করানোর থাকবে, না কেউ জানাজা পড়তে আসবে। কবর দেওয়ার জন্যও তো কেউ থাকবে না।’
তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘ভয় পেয়ো না, ঈমানদারদের সুলতান আর সকল ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই আমার জানাজায় উপস্থিত থাকবেন।’
সুলতান এই কথা শুনে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তিনি ঠিকই বলেছিলেন। কারণ আমিই সুলতান মুরাদ। আগামীকাল আমরা তাকে গোসল করিয়ে, জানাজা পড়ে সম্মানের সাথে কবর দিয়ে আসব।’
এমনই হলো। স্বয়ং সুলতান মুরাদ, রাজ্যের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সকল ধর্মপ্রাণ ও এলাকার জনসাধারণ সবাইই তার জানাজায় অংশগ্রহণ করল।

আমরা যা দেখি আর লোকমুখে যা শুনি, তা থেকেই মানুষকে বিচার করার চেষ্টা করি। অথচ আমরা জানিও না তাদের মনের অন্তস্থলে কী চলে, যার কথা কেবলমাত্র বান্দা আর তার রবই জানেন।

" ১। মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।"

২। "মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।"

সূত্রঃ الإمبراطورية العثمانية-Ottoman Empier

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form