কন্যা সন্তান আল্লাহ প্রদত্ত এক শ্রেষ্টতম নেয়ামত

মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন, পুরুষ আর নারী। এভাবে সৃষ্টি করা আল্লাহর হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। তবে আল্লাহ কাউকে শুধু কন্যা সন্তান দান করেন, আবার কাউকে পুত্র সন্তান। কাউকে আবার পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। এ বণ্টন আল্লাহ বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই হয়। যার জন্য তিনি যা উপযোগী মনে করেন, তাকে তা দান করেন কন্যা পুত্র অথবা কন্যা সন্তান। এই দুনিয়াতে কন্যা, পুত্র সন্তান উভয়ের প্রয়োজন আছে। পুরুষ মহিলার মুখাপেক্ষী, মহিলা পুরুষের মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বিশেষ হিকমতে পৃথিবীতে এমন এক জীবনব্যবস্থা দান করেছেন যেখানে উভয়েরই প্রয়োজন রয়েছে। উভয়েই একে অপরের মুখাপেক্ষী। উভয়ের সৃষ্টি ও জন্মগ্রহণ আল্লাহ বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। যখন আমরা নিজেদের অবস্থার পর্যালোচনা করি, তখন কিছু মুসলমানকে দেখতে পাই, যখন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে খুব আনন্দ প্রকাশ করেন। অতি উৎসাহের সাথে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয় মানুষদেরকে ছেলে হওয়ার খবর জানান। খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেন। খুব গুরুত্ব ও জাকজমকের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন। সব জায়গায় ছেলে হওয়ার আলোচনা করেন এবং তার লালনপালনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ছেলে সামান্য অসুস্থ হলেই দৌড়ে কখনো ডাক্তারের কাছে যান। কখনো হাসপাতালে, কখনো কবিরাজ, মৌলবীদের কাছে। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হওয়া অনেক মানুষই কন্যা সন্তান জন্ম নিলে কোনো খুশি প্রকাশ করে না। কারো সাথে মেয়ে হওয়ার কথা আলোচনা করা হয় না। আর যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, তবে কোনো উত্তর দেওয়া হয় না। যদি উত্তর দেয়, খুবই নিচু আওয়াজে, একেবারে অসহায় হয়ে বলে- আমার মেয়ে হয়েছে। অনেক সময় কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে স্বামী তার স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হয়। স্ত্রীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, কারনে অকারনে ঝগড়া হয়। এমন কি! তালাকের মত একটি চরম সিদ্ধান্তে পৌছে যায়।
মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন, পুরুষ আর নারী | আমির হোসেন
মানুষের মস্তিষ্ক বা ব্রেইন যা অন্যকোন জীবের তুলনায় সর্বোচ্চ অবস্থানের কারণে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব আখ্যা দিয়েছেন। সৃষ্টির সেরা সেই মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা অন্তত এতটুকু থাকা উচিৎ যে, একজন মহিলার ইচ্ছাধীন কি আছে, পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট করা? না কন্যা সন্তান? তার ইচ্ছাধীন তো কিছুই নেই। বরং এসব তো আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের বিষয়। তিনি ছেলে দান করতে চেয়েছেন, ছেলে হয়েছে, মেয়ে দান করতে চেয়েছেন, মেয়ে হয়েছে। সুতরাং স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট হওয়া কতটা বাড়াবাড়ি। অনেক মানুষ আছে তাদের যদি কন্যা সন্তান হয়, তারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন থেকে লুকিয়ে চলাফেরা করে। যেন কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা আবার এ প্রশ্ন না করে বসে তোমার ঘরে কি হয়েছে? আর এ উত্তর দিতে হয়, আমার ঘরে কন্যা সন্তান হয়েছে। কন্যা সন্তান হলে তালাকের ধমকি! এ ধরনের ঘটনা অনেক, কারো এক-দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার পর স্বামী তার স্ত্রীকে এ কথা বলে দিয়েছে, যদি এবারও তোমার মেয়ে হয় তাহলে তোমাকে তালাক দিয়ে দিব। কেমন ধৃষ্টতা ও বাড়াবাড়ি! যেন কন্যা সন্তানের স্রষ্টা এই নারী নিজে। পুত্র বা কন্যা হওয়া যেন তার ইচ্ছাধীন।

মূলকথাঃ- মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কিছু মানুষ এমন আছে, যারা মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণে অসন্তুষ্ট হয়। একে নিজের জন্য কলঙ্ক মনে করে। অপমানের কারণ মনে করে। আর ছেলেকে সম্মান ও গৌরবের কারণ মনে করে। ছেলে হলে খুশি হয়, আনন্দ প্রকাশ করে। আর মেয়ে হলে করে না। কন্যা সন্তান জন্মানোর কারণে নিজেকে ছোট মনে করা, একে অপমান ও অসম্মানের কারণ মনে করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। এমনকি আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর আপত্তি করা কাফিদের কর্মপন্থা। মুসলমানগণের উচিত, যদি কন্যা সন্তান হয় তখন সে যেন ঐ রকম খুশিই প্রকাশ করে, যেমনটি ছেলে সন্তান হলে করা হয়। সন্তুষ্টির সাথে ছেলেদের লালনপালন করা হয় ঠিক সেভাবেই মেয়েদেরও লালনপালন করা।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form