এক রাজদরবারে একদিন এক জেলে একটি বড় একটি মাছ নিয়ে গেলো। রাজামশাই মাছটি দেখে খুব খুশি হলেন কারণ মাছ তাঁর খুব প্রিয় খাবার।
এজন্য রাজামশাই খুশি হয়ে জেলেকে ৩,০০০ টাকা দিয়ে দিলেন।
এদিকে পাশে বসে থাকা রাণী ফিসফিস করে রাজাকে বললেন- এই সামান্য টাকার একটি মাছের দাম তুমি ৩,০০০ টাকা দিয়ে দিলে? বরং খুশি হয়ে তাকে ১০০০ টাকা দিতে পারতে। মাছ ফেরত নিয়ে টাকা দিতে বলো।
রাজামশাই বললেন- একি বলো রাণী!
রাজারা যা বলে তা নড়চড় করা অসম্ভব। তাছাড়া এটাতো রাজাদের ইজ্জতের ব্যাপার।
রাণী বললেন- আমি এমন একটি বুদ্ধি দিচ্ছি যা প্রয়োগ করলে তোমার সন্মানের কোনো হানি হবে না। জেলে মাছ নিয়ে টাকাও ফেরত দিবে।
রাজামশাই বললেন কি বুদ্ধি?
রাণী বললেন- জেলেকে ডেকে বলবে, তোমার মাছটি পুরুষ না স্ত্রী? যদি জেলে বলে পুরুষ মাছ তাহলে তুমি বলবে- আমার স্ত্রী মাছ লাগবে আর যদি জেলে বলে- স্ত্রী মাছ তাহলে তুমি বলবে- আমার পুরুষ মাছ লাগবে। অতএব, জেলে তখন মাছ ফেরত নিতে বাধ্য হবে।
রাণীর বুদ্ধিতে রাজা খুশি হয়ে জেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার মাছটা কোন জাতের? পুরুষ না স্ত্রী?
জেলে একটু ভেবে চিন্তে বললো- যাঁহাপনা আমার মাছটি পুরুষও না স্ত্রীও না। আমার মাছটা হলো হিজড়া। এবার রাজদরবারে হাসাহাসি শুরু হয়ে গেলো, রাণীও শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে হাসলেন।
রাজা জেলের বিচক্ষণতা দেখে খুশি হয়ে আরও ১,০০০ টাকা দিয়ে দিলেন।
জেলে খুশি হয়ে মোট ৪,০০০ টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। রাজমহলের গেটের সামনে
যেতেই তার কাছে থেকে ১০০ টাকা মাটিতে পড়ে গেলো।
জেলে তা তুলে চুমু খাচ্ছে কপালে লাগাচ্ছে, রাণী উপর থেকে তা দেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।
দ্রুত গিয়ে যাঁহাপনাকে বললো- এই জেলে এত লোভী কেন? ৪,০০০ টাকা থেকে মাত্র ১০০ টাকা পড়ে গেছে জেলের তা সহ্য হচ্ছেনা। যাঁহাপনা, আপনি তাঁকে শাস্তি দেন।
রাজাও ভাবলেন- ঠিকই তো মাত্র ১০০ টাকা পড়ে গেছে, গেট দিয়ে কতো গরিব মানুষ আসা যাওয়া করে। তারা না হয় কুঁড়িয়ে নিতো।
রাজামশাই জেলেকে ডেকে বললেন- এই লোভী জেলে? তোমার এতো লোভ কেন?
এতো টাকা দিয়েছি তোমায়। মাত্র ১০০ টাকার লোভ সামলাতে পারলে না? তা তুলে নিয়েছো? তোমাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
জেলে বলল- যাঁহাপনা, আমি ঐ টাকাটা তুলে নিয়ে চুমু খেয়েছি তা হুজুর লোভের কারণে নয়। টাকার গায়ে আমার রাজামশাই ও রাণী মা'র নাম লেখা আছে। তাই ভাবলাম, টাকাটা মাটিতে পড়ে থাকলে হয়তো অন্য কোনো মানুষ পা দিয়ে পিষবে আর আমার রাজা ও রাণী মা'র ইজ্জতের হানি হবে। তাই আমি টাকাটা তুলে চুমু খেলাম এবং কপালে ঠেকিয়ে সালাম করলাম।
এবার রাজামশাই আরও খুশি হয়ে জেলেকে আরও ১,০০০ টাকা দিলেন।
সর্বমোট ৬,০০০ টাকা দিয়ে জেলে বিদায় করলেন।
আর রাজ ঘোষককে বললেন- তুমি সমগ্র রাজ্যে ঘোষণা করে দাও- কেউ যেন বউয়ের বুদ্ধিতে না চলে। আর এটাও বলে দাও বউয়ের বুদ্ধিতে চললে ৩,০০০ টাকার জায়গায় ৬,০০০ টাকা লোকসান হয়।