'সঙ্গ' মানে বন্ধু বা বন্ধুর মত মানুষগুলো যারা সর্বক্ষন আমাদের চারপাশে ঘিরে থাকে। আমাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক তাদের প্রভাব পড়ে আমাদের চরিত্র এবং ভাবনায়। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সান্নিধ্যে আসতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির চিন্তা, বিশ্বাস প্রবণতা তার ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে। সৎ সঙ্গ তাকে জীবনের পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়, অপরপক্ষে অসৎ সঙ্গ তার সুনাম, সাফল্যকে ধ্বংস করে।
ব্যক্তি তার মানসিক ও সামাজিক অভাব পূরণ করার জন্য সঙ্গী সাথীদের সাথে চলাফেরা ও উঠা বসা করে। সঙ্গীদের চরিত্র যদি পবিত্র ও সুন্দর হয় তাহলে তাদের সঙ্গই সৎসঙ্গ। এ ধরনের সঙ্গীর আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যক্তির নিজস্ব চরিত্র বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। ব্যক্তির পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের উপর তার নিজের পুরোপুরি দখল সচরাচর থাকে না, সঙ্গ চরিত্র দ্বারা তা অনেকাংশে প্রভাবিত হয়। সৎ সঙ্গের প্রভাবে ব্যক্তির নির্মল চরিত্র নির্মল থাকে এবং তা আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। অধিকন্তু সৎ সঙ্গের প্রভাবে অনেক কলুষিত চরিত্রের ব্যক্তিও অনুকরণ ও অনুসরণের পথ অবলম্বন করে নিজের চরিত্রকে নির্মল ও আকর্ষণীয় করে তোলার সুযোগ পায়। শিশুকাল মানব ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্রের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। এর কারণ শিশু তার সঙ্গী ও পারিপাশ্বিকতাকে অনুসন্ধিৎসার সাথে অনুকরণ করে। তাই তো শৈশবে যদি শিশুকে সৎসঙ্গের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় তাহলে বাকি জীবনের জন্য সে চরিত্র গঠনের এক বিরাট সুযোগ পাবে। অপরপক্ষে, অসৎ সঙ্গের কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ।
সঙ্গ দোষে কি না হয়। সঙ্গীর চরিত্র যদি হয় অসৎ, নিয়ম বিরুদ্ধ এবং কলুষিত হয় তাহলে তার চরিত্রের মধ্যে এ খারাপ দিকগুলো অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা খুব বেশি। সঙ্গ দোষে একজন সৎ চরিত্রের মানুষ যেমন তিলে তিলে অধঃপতনের দিকে তলিয়ে যেতে পারে, তেমনি একজন অসৎ চরিত্রের ব্যক্তিও দিন দিন সঙ্গ দোষের উস্কানি এবং কুপ্রভাবে আরও চরিত্রহীন হয়ে যেতে পারে। একটি ল্যাটিন প্রবাদ এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে-
তুমি যদি খোঁড়াদের সাথে বসবাস কর, তাহলে তুমিও খোঁড়াতে শিখবে
নিশ্চয়ই এটা একটা অনিবার্য এবং দুঃখজনক পরিণতি।