গ্রামের মেম্বার

গ্রামের মেম্বার

ফজলু মেম্বর দুই কেজি মিষ্টির প‌্যাকেট হাতে নিয়ে এসে দেখল মনছুর আলী তার চায়ের দোকানের সাথে সাঁটিয়ে লিখে রেখেছে, এখানে মরা মাইনষেরে নিয়া কোন আলোচনা করা যাইব না।

ফজলু মেম্বর সে লেখাটাকে না দেখার ভান করে প্রথমে দোকানদার মনছুর আলীর হাতে পর পর দুইটা মিষ্টি তুলে দিল। মনছুর মিয়া মিষ্টির দানা চিবাইতে চিবাইতে কইল - কি? মেম্বর, কিসের জন্যে মিষ্টি খাওয়ালে, হেইডা তো কইলা না। মেম্বর বলল - কমুনে, আগে খাও মিয়া।

এরপর একে একে উপস্থিত দোকানের প্রায় চৌদ্দ/পনের জনের মাঝে মিষ্টি বিলি করা শেষ হল। একজন কইল - মিষ্টিডা ভালই মেম্বর, তই কি উপলক্ষে খাওয়ালে হেইডা জানলে আরো ভাল লাগত। মেম্বর এবারও কোন জবাব না দিয়ে দোকানদার মনছুর আলীকে বলল - সবাইরে এক কাপ কইরা চা দেও।

দোকানের এক কোণায় বসে থাকা হাঁটুভাঙ্গা ছালাউদ্দীন সবার মুখের দিকে একবার নজর বুলাইয়া লইয়া কইল - মিষ্টি খাওনের পর চা খাইতে পাইংসা লাগে, আগে একটু ঝাল চানাচুর হইলে মনে হয় চা ডারে ঝুমাইয়া খাওন যাইত। উপস্থিত আরো কয়েকজন তারে সমর্থন জানাইল।

মেম্বর বুঝল, আরো এক'শ টাকা পকেট থিক্যা খুলতে হইব। দোকানদার মনছুর মিয়া এরপর তিন প‌্যাকেট চানাচুর ভেংগে সবাইরে খাওয়ালো এবং সে নিজেও খেলো। সবার মুখেই এবার একটা ঝাল ঝাল ভাব চলে এসেছে। এবার ঝুমাইয়া চা খাওনের পালা।

মনছুর আলী স্পেশাল করে চা বানাচ্ছে। চা বানানো শেষ হলে সবার হাতে একটা একটা করে কাপ তুলে দিল। এখন চায়ের কাপে সবাই চুমুক দেবে। কেউ কেউ হয়ত দু-একটা চুমুক দিয়েও দিয়েছে। এর মধ্যে কেউই লক্ষ্য করেনি এখানে শাজাহান চৌকিদার এসে কখন দাঁড়িয়েছে। সে কিছুটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল - মেম্বর সাব, দুজন পুলিশ আইছে, আপনেরে আমার সাথে যাইতে কইলো।

চা খাওয়ার মাঝেই সবাই এক নজর দূরে চেয়ে দেখল, দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শাজাহান চৌকিদারের সাথে ফজলু মেম্বরও পৌছে গেল ওখানে। একজন পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে দিল ফজলু মেম্বরের দুহাতে। হঠাৎ চায়ের দোকানে যেন নিশি রাতের নীরবতা নেমে এলো। কেউ কোন কথা বলছে না। কিন্তু এ অবস্থা আর কতক্ষণ? একজন নীরবতা ভেংগে কিছুটা গর্জে উঠে বলল - বুঝছি, হেইডা ঐ হারামির বাচ্চা বাবুইল্লার কাজ।

আরেকজন বলল - আহারে, থানায় নিয়া গিয়া পয়লা কি মাইরডাই যে দেব মেম্বর সাবরে! দোকানের এক কোণে বসে থাকা হাঁটুভাঙ্গা ছালাউদ্দীন হঠাৎ দাঁড়াইতে গিয়া একজনের গায়ের উপর পড়তে পড়তে বলল - মাইনষেরে যখন খুন করে তহন মনে ছিল না যে আমাগোও একদিন মরতে হইব? এ কথার কেউ কোন উত্তর দিল না।

দোকানদার মনছুর আলী তার বাকীর খাতা বের করে লিখতে শুরু করল, পনের কাপ চায়ের দাম ষাট টাকা, তিন প‌্যাকেট চানাচুরের দাম এক'শ পাঁচ টাকা হয় কিন্তু সে লিখল এক'শ টাকা । কারণ সে নিজেও কিছু খাইছে। পরক্ষণে মনে হলো, ধুর এসব লিইখা লাভ কি, ঐ মেম্বর সাব কি এত সহজে ছাড়ন পাইবো? এই চা চানাচুরের ট্যাকা নিজের গাঁইট থিক্যাই যাইব।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form