বৃদ্ধের জীবন সংগ্রাম

বৃদ্ধের জীবন সংগ্রাম

সুন্দর এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন কি এক বিচিত্রময়। শিশুকাল কাটে মাতৃকুলে, শৈশব আর কৈশোর খেলার মাঠে কাঁদা মাটিতে, যৌবনে রঙিন চশমা পরে কতো কিছু দেখতে যে মন চায়। এর মধ্যে যখন দমকা হাওয়ার মতো পরিবারের দায়িত্ব চলে আসে নিজের কাঁধে তখন সব কিছুকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে সুন্দর আর সচ্ছল ভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিজেকে জীবন যুদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে জীবন যুদ্ধের পদচারণা। জীবন চলার পথে হরেক রকমের মানুষের ভিড়ে কতভাবেই না মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ করে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ নানা রকম পেশার মধ্য দিয়ে মুক্তির পথ বের করে নিতে হয়। সমাজ-সংসারের কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবেলা করতে বৃদ্ধ বয়সে নিজেকে আইসক্রিম বিক্রয় করার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের অগ্নি কুমার দেব নাথ।

একদিন বিজয়নগর উপজেলা বুধন্তি ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামের ঈদগাহ মাটের সামনে আইসক্রিম বিক্রয় করতে দেখে কৌতূহল বশতঃ তাহার কিছু ছবি তুলে ইদানিং একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। নিশ্চয়ই এসব মানুষ এমনি এমনি বৃদ্ধ বয়সে কাজে নিয়োজিত নন। এসব শ্রমিকের দিনশেষে বাড়ি ফেরার পথের দিকে চেয়ে আছে কোন বৃদ্ধ মা, ছোট ছেলে-মেয়ে। অথবা বয়স্ক কোন ব্যক্তির অবহেলিত অথবা অপ্রাপ্ত বয়সী কোন মেয়ে নতুবা তার স্ত্রী নতুবা কাজের অনুপযোগী ছেলে। দিনশেষে যখন একজন শ্রমিক তাদের পেশি নিংড়ে, শক্তি দিয়ে, ঘেমে নেয়ে যেটুকু টাকা পয়সা বা বাজার সদাই নিয়ে বাড়িতে ফেরে তখন হয়ত তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটে। একটু স্বস্তি নিয়ে কিছু রান্না করে খেতে পারবে। অক্ষম, একজন বয়স্ক শ্রমিকের দিনশেষে বারবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে ফেরা দেখে তার সহধর্মীনির চোখ বাষ্পাকুল হয়, তার নিরক্ষরতার জন্য একপাল অক্ষম ছেলেমেয়ের সামনে যখন চালডাল নিয়ে বাড়ীতে ফিরেন তখন সেই ছেলেমেয়ের মনে ভালো কিছু খেতে পাবার আনন্দের জোয়ার বইতে পারে। হতেও পারে পেশি নিংড়ে যে ছেলেকে এই বৃদ্ধ মানুষ করেছেন সে তাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। তাই হয়তো বৃদ্ধ বয়সে তাকে এখনো পেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়।

এমন হয়তবা হাজারো কোন গল্প জড়িয়ে থাকে এসব মানুষদের শ্রমিক হিসেবে দিন যাপন করার পিছনে। আমি গরীবের ছেলে অথবা বেকার। এদের একজনকে পুনর্বাসন করার ক্ষমতা নাই। তাহলে এক্ষেত্রে আমরা সামান্য সুযোগ পেলে কেন তাদের পরিশ্রম করাতে পিছু হব? নায্য মুল্যের চেয়ে পাচঁ-দশ টাকা বেশি দিয়েও তো আমরা তাদের মুখে হাসি ফোটতে পারি। আর সেই হাসি পরোক্ষভাবে তাদের পরিবারকে ছুয়ে যায়। আর অন্তরীক্ষে চেয়ে যিনি কলকাঠি নাড়ছেন তার অসীম রহমত আপনার উপরও পড়তে পারে। অাপনার পাচঁ-দশ টাকার ত্যাগ তাদের জন্য সামষ্টিক ভাল মানের পারিশ্রমিক। নায্য মুল্যের চেয়ে পাচঁ-দশ টাকা বেশি দিয়ে বলুন ঐটা আপনার বখশিশ, ঐটা আপনার লাভ দিলাম। এরপর তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তাদের চোখে সামান্য পানিও আলোড়ন করবে, মুখে এমন হাঁসি আসবে। যে হাঁসি আপনি সঙ্গায়িত করতে পারবেন না। এই হাঁসিটা, এই অশ্রবিন্দু কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারবেন না। আমি এমন হাঁসি প্রায়ই দেখার চেষ্টা করি সময় সুযোগ থাকলে। আপনি না হয় এই নেশাটা আমার কাছ থেকে শিখুন।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form